উওর মেরু থেকে তীব্র শীতের হিমেল হাওয়া টেরিটরিগুলো পার হয়ে প্রভিন্সে ঢুকে চুপিসারে সবুজ রঙা পাতাগুলোকে হঠাৎ করে বধুবেশে হলুদ লালে সাজিয়ে দেয়। আর তারপর বিষাদময় দীর্ঘ শীতের জন্য প্রস্তুতি পর্বে কনকনে বাতাস এসে ঝড়িয়ে দেয় সব রঙ আর এই সুযোগে শহরময় দাপিয়ে বেড়ায় যত অশরীরি আত্মা, প্রেতাত্মা, ভূত, পেত্নী, শাকচুন্নি ও স্কন্ধকাটারা। ভয়ংকর এক ভুতুড়ে পরিবেশ, রাস্তার মানুষ কমে যায় আর জনমানবহীন রাস্তায় হাটতে গেলেই মনে হয় ঠান্ডা একটি মৃত হাত যেন ছুঁয়ে দিচ্ছে পেছন থেকে।গা শিরশির করা এই পরিবেশেই মিষ্টি কুমড়ার তৈরী জ্যাক লন্ঠনহাতে এই অশরীরিদের সন্তুষ্ট রাখতে পালন করা হয় হ্যালোউইন। ক্ষুদে ছানাগুলো সাজে দারুন সব পোশাকে আর ক্যান্ডি কুড়িয়ে বেড়ায় পাড়াময়। বাচ্চাদের জন্য হ্যালোউনের চেয়ে মজার বোধহয় আর কিছুই হয় না সারাবছর। আর তাদের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা যারা বড়-বাচ্চা আছি তারাও সামিল হই হ্যালোউইনের ভয়ংকর কিন্তু মজাদার এই উৎসবে।

আর তাই টরন্টো শহরে নব- আবির্ভুত “কলাপাতা” রেষ্টুরেন্টের সত্বাধিকারী নাহিদ আক্তার এবং মিঠু ভাই আয়োজন করেন এক অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ হ্যালোউইন পার্টির। সম্পূর্ণ রেস্টুরেন্ট সাজানো হয় ভয়ংকর ভুতুড়ে পরিবেশে। দু’জন অত্যন্ত উদ্দোমী তরুন তরুনী মেঘ ও সূচী তাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে পুরো রেস্টুরেন্টই পাল্টে ফেলে একটি হন্টেড হাউজে।
যেহেতু কয়েকমাস আগে আমি “মরে”(?) গিয়েছিলাম এবং প্রিয়জনেরা আমার শোকসভা করেই ফেলেছিলেন… তাই ভাবলাম একটি কঙ্কাল সেজেই ভয় দেখাই সবাইকে। আমি ছাড়াও হাওয়াই মিঠাই কন্যা সাজে নাহিদ আপু, সুপারগার্ল সাজে মৌ মধুবন্তী আপু, কিউবান ওমেন সাজে মুক্তি প্রসাদ, ডেভিল সাজে শিখা রউফ, ক্যারিবিয়ান গার্ল সাজে দিলারা নাহার বাবু, মিতা রহমান, রহিমা মাহমুদ, ক্যাট ওমেন সাজে মাসুদা পলি, জ্বীন সাজে মাইশা, মিনি মাউস সাজে রাইশা, জম্বি সাজে মেঘ, জম্বি ব্রাইড সাজে সূচী এবং আরও অনেকে রঙিন কিন্তু ভয়ংকর করে তোলেন পার্টি। নিছক মজার এই পার্টির খাবার ছিল অসাধারন। পাস্তা ও টার্কি দিয়ে শুরু হয় আমাদের রাজকীয় ভোজ এবং ডিনারে ছিল বৃষ্টির রাতের সবচেয়ে উপযুক্ত খাবার খিচুরী সাথে মাংস ডিম সালাদ এবং আরও অনেক কিছু। হ্যালোউইন এর জন্য দেওয়া হয় ক্যান্ডি ব্যাগ।

ডিনার শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রানোচ্ছল নৃত্য পরিবেশনা করেন মেঘ ও সূচী। তারপর নাচেন টরোন্টের “রুনা লায়লা” খ্যাত ফেরদৌসী গুলবাহার। ক্লাসিকাল নৃত্য পরিবেশনা করেন মিষ্টি মেয়ে রাইসা ও মাইশা। গান পরিবেশনা করেন জুঁই, তাহমিনা ও রুনা। হাসি, গান, আনন্দে ভরে ওঠে হ্যালোউইনের চমৎকার রাত্রি। ছোট বন্ধুরা তাদের মজা পায় চকলেট, মেকআপ আর খেলাধুলার মাঝে। বড়রা মজা পায় খাবার, মেকআপ আর গল্প করার মধ্য দিয়ে আর আমি মজা পাই ভুত সেজে সবাইকে ভয় দেখিয়ে। আর সবাই মিলে উপভোগ করি রঙিন এই শহরের আরও এক রঙ।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন