ভাললাগা বনাম ভালবাসা :
আমরা সচারচর আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ভাললাগার সাথে ভালবাসার রসায়ন ঘটিয়ে একটা তালগোল পাকিয়ে ফেলি। শুধু আমাদের দোষই বা দেই কিভাবে দেশ বিদেশের অনেক বরেণ্য ব্যাক্তিবর্গ একই কাজ করতে যেয়ে সংসার জীবনে বিপত্তি ডেকে এনেছেন। খেলাধুলার ক্ষেত্রেও ঠিক একই ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষকরে, আমরা বাংলাদেশিরা অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। ব্রাজিল/আর্জেন্টিনা-র সাপোর্ট করতে যেয়ে জীবন বিসর্জনের নজিরও আমাদের আছে। তাই চলমান বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে কিছু লিখতে যেয়ে সর্বাগ্রে ভাললাগা -ভালবাসাকে পূর্ণাঙ্গ ভাবে বিশ্লেষণ করার লোভ সামলাতে পারলামনা।

আমি এই লেখাটি যখন লিখছি ততক্ষনে থিসেরা পেরেরা-র শ্রীলংকা মাত্র ২৯.৫ ওভার খেলে ১৩৬ রানে সব কয়টি উইকেট হারিয়ে ফেলেছে। অনেকটা একইভাবে গতকাল পাকিস্তান ভয়ঙ্করভাবে ধরাশয়ী হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। উভয় খেত্রেই আমি কষ্ট পেয়েছি। আমার এই কষ্ট পাওয়া মানে এই নয় যে আমি শ্রীলংকার অথবা পাকিস্তানের সাপোর্টার। মানি লোক তিনি ডক্টর ইউনুস হোক অথবা শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হোক এনাদের মান হানি জাতীয় কথা শুনলে একইভাবে আমি কষ্ট পাই । জয়সুরিয়ার সেই শ্রীলংকা অথবা ইমরান খান/ ওয়াসিম আকরাম/ ওয়াকার ইউনূসের সেই পাকিস্থানের এমন বিপর্যয়ে আমি বুনো আনন্দে আনন্দিত নই। আমি টিভির সামনে উদগ্রীব হয়ে বসে থাকি প্রতিযোগিতামুলুক টান- টান উত্তেজনাময় খেলা উপভোগ করার জন্য। সেটা যে দেশেরই হোক না কেনো।আমার স্পষ্ট মনে আছে একবার পাকিস্তান বাংলাদেশ খেলায় ইনজামাম/সায়ীদ আনোয়ার কে দিয়ে ওরা বল করিয়েছিলো। আমি সে অপমানে অপমানিত না হয়ে আশায় আশায় বুক বেঁধেছিলাম।

যা বলছিলাম, ভাললাগা ও ভালবাসা কিন্তু একই জিনিসনা এটা পুরাপুরি বিশ্বাস করতে হবে। আমি উমুক চিত্রনায়ক /চিত্র নায়িকা পছন্দ করি, কিন্তু ভালোবাসি ঘরের মানুষকে। আমি চাইনিজ খেতে পছন্দ করি কিন্তু ভালোবাসি ঘন ডাল দিয়ে মোটা চালের ভাত মেখে ঝাল আলু ভর্তা /কাঁঠালের বিচি ভর্তা অথবা সজনে, করলা দিয়ে ছোট মাছের চচ্চড়ি। আমি বেন স্টোকস-এর খেলা পছন্দ করি। সম্প্রতি ইংল্যান্ড -দক্ষিণ আফ্রিকার খেলায় বেন স্টোকসের সেই বিখ্যাত এক হাতের ক্যাচ ধরাকে আমি অনেক উপভোগ করেছি. আবার সেই বেন স্টোকস যখন বাংলাদেশেষে এসে খেলার মাঠে হ্যান্ড শেখ করতে চাইনি, আমি ওর এই কাজকে ধিক্কার জানিয়েছি. সাকিবের সেই বিখ্যাত সালুটকে উপভোগ করেছি। একটু পরে লড়াকু আফগানিস্তানের সাথে অস্ট্রেলিয়ার খেলা শুরু হবে। আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি স্মিথ/ ওয়ার্নার ডেভিডের দল রশিদ /মুজিবদের গুগলি কিভাবে মোকাবেলা করে। এটার নাম হচ্ছে ভাল লাগা / পছন্দ করা । কিন্তু ভালবাসা সেতো সযত্নে জমা রেখেছি মাশরাফিদের জন্য। আমাদের এখানকার স্থানীয় সময় অনুযায়ী আগামীকাল ভোর সাড়ে পাঁচটায় শুরু হবে বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার খেলা। হয়তো ইংল্যান্ডের সাথে হেরে যাওয়া খ্যাপাটে হাসিম আমলা/রাবাদা দের দেশ প্রবল সাঁড়াশি আক্রমণ করবে আমাদের উপর। আমরাও জানি কিভাবে প্রতি আক্রমণের দাঁত ভাঙা জবাব দিতে। আর সেই খেলা দেখার জন্য ভোর তিনটায় শেহেরী খেয়ে হয়তো আর ঘুম হবেনা। আমার ছেলে হয়তো গালে লালসবুজের পতাকা একে সারা রাত বিছানায় ছটফট করবে । এরই নাম হচ্ছে ভালবাসা, যা সকল ভাল লাগার অনুভুতিগুলিকে একসাথে করে হৃদয়ের কুঠুরিতে বাস করে। আর সেই ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামীকাল একবারে ফজর নামাজ পড়ে বাপ্/বেটা টিভির সামনে বসে থাকবো । জয় পরাজয় খেলারই অংশ । যে কোনো ফলাফলের জন্যই প্রস্তুতুতি থাকবো । জয় হোক বাংলাদেশের। জয় হোক ক্রিকেটের. (চলবে)

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদের খুশি
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯ : দ্বিতীয় পর্ব
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন