আজকাল প্রায়শই ফেসবুকে আমার পরিচিত এক বন্ধুর একটা পোস্ট আমাকে বিস্মিত করে। অবশ্য শুধু আমার ওই বন্ধুই নয় , আরো অনেকেই একই ধরণের পোস্ট ফেসবুকে দিয়ে থাকেন। যদিও কাউকে ব্যাক্তিগত ভাবে আঘাত দেবার জন্য এই লেখা নয়। কিন্তু এই ধরনের পোস্ট আমাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আঘাত করেন।

আমার সেই বন্ধুবর প্রায়শ লেখেন “আজ আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্ট পরিস্কার করা হবে। যারা নিয়োমিত যোগাযোগ করেন না , তাদেরকে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে মুছে ফেলা হবে.”- কথাটা আমার কাছে আপত্তিকর মনে হয় । কারন কেউই জোর করে ওনার ফ্রেন্ডলিস্টে আসেন নাই। হয়তো উনি  স্বইচ্ছায় ওনার ফ্রেন্ডলিস্টে কাউকে আমন্ত্রন  করেছেন অথবা ঊনি অন্য কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট স্বইচ্ছায় গ্রহণ করেছেন। উভয় ক্ষেত্রেই ওনার “ইচ্ছাই” কাজ করেছে। কারন নিজের ফ্রেন্ডলিস্টটা ভারী করে জন্য উনি এই কাজটা করেছিলেন। এটা এক প্রকারের আত্মতৃপ্তি , নিজের অবস্থানটা তুলে ধরার একটা অপচেষ্টা মাত্র। কিন্তু একটা সময় আসে যখন এই ফ্রেন্ডলিস্টের বাড়ার গতিটা আস্তে আস্তে থেমে যায়। আর এই বিষয়টা ওনাকে চিন্তিত করে তোলে , ওনার কাছে মনেহয় , ওনার “জনপ্রিয়তা” কমে যাচ্ছে। তাই আলোচনার বিষয় হওয়ার জন্য বিকল্প পথ খোজেন।

বিকল্প পথটা কি ? একটা হুমকি – “আজ আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্ট পরিস্কার করা হবে। যারা নিয়োমিত যোগাযোগ করেন না , তাদেরকে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে মুছেফেলা হবে.”। যাতে আরো একবার ওনাকে খুশী করার সবাই কিছু লিখবেন। এটা এক ধরনের আত্মতৃপ্তি ।
আপনি যখন কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ কোরেছিলেন, তখনই আপনার ভাবা উচিত ছিল , রিকোয়েস্টকারী ব্যাক্তির সাথে বন্ধুত্বের প্রয়োজনতা কতটুকু, বা আদৌ তার প্রয়োজন আছে কিনা। কিন্তু আপনি তা করেন নাই , কারন আপনার নিজের প্রয়োজনে আপনার ফ্রেন্ডলিস্ট ভারী করেছেন।

আর আজ ঠিক একই কারনে “বহিস্কারের” হুমকি দিচ্ছেন।
এটা কোনো রাজনৈতিক মঞ্চ নয় যে কাউকে কাউন্সিল মিটিং ডেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে “বহিস্কার” করতে হবে। আপনার ব্যাক্তিগত একাউন্ট , আপনার অধিকার আছে যে কাউকে আপনি আপনার ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে বাদ দিতে পারেন। এজন্য কোনো প্রচারে বা প্রচারনার প্রয়োজন আছে বলে আমের মনে হয়না।,

সবশেষে আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ রেখে শেষ করবো :-
-কারো “ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট” গ্রহণ করার আগে ভেবে দেখুন,
-একই ভাবে কারো কাছে “ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট” পাঠাবার আগেও  ভেবে দেখুন,
-কাউকে অপ্রয়োজনীয় মনে হলে ঢাক ঢোল না পিটিয়ে তাকে আপনার “ফ্রেন্ডলিস্ট” থেকে ডিলিট করে দিন।এটা আপনার অধিকর।

আবারো বলছি কারো মনে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে আমার এই লেখা নয়। মনে রাখবেন আপনি যেন কারো মনোকষ্টের কারণ না হন।
ভালো থাকুন। এই শুভ কামনায় শেষ করছি।

১ মন্তব্য

  1. লেখাটা পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটা কথা মনে পরে গেলো। তখন হলে মাঝে মাঝে ক্যাডাররা হল গেট পাহারা দিত এবং সাথে কিছু বহিরাগত চেলা চামুন্ড থাকতো। তো একদিন কোনো এক চেলা পাহারায় আছে, আর আসল ক্যাডার হয়তো ক্যান্টিনে চা খেতে গেছে। তখন চেলা দেখে যে হলের বাইরের থেকে দূরে কেউ যেন আসছে। তখন সে একটু হুঙ্কার দিয়ে বলে, “হল্ট” কিন্তু তার কোথায় কোনো কর্ণপাত না করে ওই বেক্তিটি আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে থাকে। চেলা আবারো “হল্ট ” বলে কিন্তু কোনো কাজ হয় না, তখন চেলা একটু ভয় পেয়ে গেছে। এই বার সে উচ্চস্বরে বললো “এই হল্ট কইছি কিন্তু”. আপনার লেখায় তাই মনে হলো, “এই নিয়মিত যোগাযোগ না করলে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে মুছে দিবো কিন্তু” . আরে মুছে দিবেন দেন তো বার বার বলার কি আছে, কেউতো আপনার হাত পা ধরে আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকার জন্য বসে নেই।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন