পৃথিবীতে স্বর্গ নাই। কাশ্মির বলেন। আর কানাডা বলেন। অথবা অন্য কোন উন্নত দেশ। সবখানেই সমস্যা আছে। থাকবে। আপনি যদি কানাডাকে স্বর্গ ভেবে এসে থাকেন তবে ভুল করেছেন। যাঁরা কানাডা আসতে চায়, তাঁদের অনেকে এমনটাই ভাবে। ভাবনার সাথে বাস্তবের অমিল হলে কষ্ট পেতে হয়। এরূপ ভাবনার একটা কারণ হতে পারে শুধুমাত্র একপেশে ভাবনা। মুদ্রার অন্যপিঠের খবর না নেওয়া। ইউটিউবে একটা চমৎকার ভিডিও দেখেছিলাম: ”The danger of a single story”. সময় থাকলে আপনিও দেখতে পারেন- https://www.ted.com/talks/chimamanda_adichie_the_danger_of_a_single_story

আজ সকালে বাসা থেকে বের হলাম। আমার বউ আমার আগেই বের হয়ে গিয়েছিল। পনের মিনিট পর বউ ফোন করল। Pape থেকে St. George পর্যন্ত সাবওয়ে সার্ভিস বন্ধ। শাটল বাস চলছে। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন দিল। কোন শাটল বাস নাই। হেঁটে হেঁটে Yonge পর্যন্ত গিয়েছে। ততক্ষণে আমিও Pape স্টেশন পৌঁছেছি। ট্রেন থেকে বের হওয়ার পরই মানুষের লাইন শুরু। বিশ মিনিট পর রাস্তায় উঠতে পারলাম। শাটল বাসের জন্য কী যে যুদ্ধ! [প্রমাণ হিসেবে ছবি দিলাম ☺] এক ঘন্টা ১৭ মিনিট পর অফিস পৌঁছালাম। উল্লেখ্য, এটা প্রতিদিনের চিত্র নয়। তাই এটা ভাবাও ঠিক হবে না যে কানাডার যোগাযোগ ব্যবস্থা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মত বা তারচেয়েও খারাপ। শুধু মনে রাখতে হবে, মাঝে মধ্যে এমন হতে পারে।

একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়। বিশেষ করে কানাডায় যাঁরা বেশ ক’ বছর আছেন তাঁরা বলেন। কানাডার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের দেখা পেতে কত মাস অপেক্ষা করতে হয় সে বিষয়ে। আর জরুরী বিভাগে যে জরুরী চিকিৎসা পাওয়া যায় না সে অভিযোগ হরহামেশাই শোনা যায়। ব্যাক পেইনের জন্য আমি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের দেখা পেয়েছিলাম প্রায় তিন মাস পর। আমার ছোট মেয়েকে চোখের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল প্রায় ছয় মাস। একবার প্রচন্ড পিঠের ব্যাথা নিয়ে ভোর বেলা এখানের এক হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গিয়েছিলাম। সাথে সাথে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলো। তারপর সবুজ মার্ক অনুসরণ করে শেষের রুমে অপেক্ষা করতে বলল। রাত নয়টার দিকে ডাক্তারের দেখা পেলাম। সারাদিন না খেয়ে মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেল। রোজার সময় ছাড়া আমি আর অন্য কোন সময় রোজা রাখতে পারি না। মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। ডাক্তার এসে কয়েকবার সরি বললেন। দেরী হওয়ার কারণ বললেন। জানালেন আমার চে’ আরো অনেক জরুরী রোগী ছিল। যাঁরা লাল মার্ক অনুসরণ করে অন্যদিকে অপেক্ষা করছিল। আমার চে’ আরো এক শ্রেণী উপরে জরুরী রোগী ছিল। তাঁরা ছিলেন (সম্ভবত) অরেঞ্জ মার্ক অনুসরণকারী। তিনটি রঙের অধীনে জরুরী রোগীদের বিভক্ত করে জরুরী বিভাগ। আমার মত রোগীদের অভিযোগ থাকে সারাদিন জরুরী বিভাগে বসিয়ে রেখেছে।

এখানের রাস্তা-ঘাটে ভিক্ষুক দেখেছেন? কতজন ভেবেছেন যে কানাডায় এসে ভিক্ষুক দেখবেন? [প্রমাণ হিসেবে আরেকটি ছবি]। পার্কের বেঞ্চিতে শীতের দিনে কাঁথা মোড়ানো ভবঘুরে দেখেছেন? যদি দেখে না থাকেন, দেখতে পাবেন। একদিন আপনার সামনেও পড়বে। এসব দেখে আশ্চর্য হবেন না। কাঙ্খিত জব না পাওয়ার কথাতো প্রায় সবাই বলেন। এরকম আরো কত সমস্যা। তবে এটা ঠিক কানাডা পৃথিবীর অনত্যম বসবাস উপযোগী একটি দেশ। আপনি যদি কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, আমার মনে হয় সিদ্ধান্তটি ভুল নেননি।

সমস্যা সবখানেই আছে। কম আর বেশি। সমস্যার ধরন ভিন্ন। সমস্যাহীন দেশ নাই। সমস্যা নাই শুধু স্বর্গে। কিন্তু পৃথিবীটা স্বর্গ না। স্বর্গ পাওয়া যায় পরকালে। স্বর্গ বা বেহেশত পাওয়ার কাজ করলে।

টরন্টো

নভেম্বর ০৭, ২০১৯

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন