কিছুদিন আগে আমার ল্যাপটপটা ক্রাশ করেছে। তাই মাস খানেক মোবাইল দিয়ে কস্ট  নিজের কাজ চালানোর পর সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা ডেক্সটপ কিনি । যাতে বাচ্চারা খেলার জন্য টানা হেঁচড়া না করতে পারে। কম্পিউটারটা সেট করার পরই সমন জারি করলাম এটা শুধু পড়াশুনা আর লেখার কাজে ব্যবহার করা যাবে। কোন গেম এখানে খেলা যাবে না। কারণ হিসাবে জানালাম তাদের গেমের জন্য আমার প্রতি বছর ল্যাপটপ নষ্ট হচ্ছে। আমার দুই ছেলে ওয়ালিদ আর তাসিন বেশ শান্ত ভাবেই শুনলো । তারপর ওয়ালিদ বলল “আম্মু আমার অ্যাসাইনমেন্ট আছে। শেষ করতে হবে।” আমি বললাম “ ঠিক আছে কর।” তার কিছুক্ষন পর তাসিন এসে বলল “ Ammu can I play ABCYA  math game? It’s  educational”.  আমি বললাম “না”। আমার ছেলে আমাকে বুঝাতে চেষ্টা করলো “  I can learn from here.” আমি বললাম “ঠিক আছে দেখাও তোমার ম্যাথ গেম।” সে সত্যি সত্যি একটা অ্যাপ খুললো যা থেকে সে ম্যাথ শিখতে পারে। সে অংক করছে দেখে আমি অন্য কাজে চলে গেছি। কিছুক্ষন পর এসে দেখি সে ফাইটিং গেম খেলতে শুরু করেছে । আমি জিজ্ঞেস করলাম “ এটা তোমার ম্যাথ গেম? আমাকে দেখাও এই ফাইটিং থেকে তুমি কি ম্যাথ শিখছো? সে বলল “ If you hit somebody, he has to answer math question.” আমি বললাম এটা কোন ভাল গেম না এটা থেকে তোমার ম্যাথ শেখার দরকার নেই। সে তার গেম বন্ধ করল।
কয়েকদিন আগে তাসিনের স্কুলে ম্যাথ ভেস্টিভল ছিল। আমি যখন কাজ থেকে বাসায় ফেরার পথে ওকে বেবিসিটারের বাসায় আনতে গেলাম সে গাড়িতে উঠতে উঠতে বলল “ Today is math night. Ma can I go to school?” আমি বললাম,” ঠিক আছে চল যাই তোমার ম্যাথ নাইটে। দেখি তুমি কি কর!” তাসিন খুব খুশি। তার স্কুলে ঢুকে আমিও খুব অবাক হলাম আয়োজন দেখে। আমার আগে এমন উৎসবের ধারনা ছিল না। প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করার পর অংশগ্রহণকারী ছাত্র ছাত্রীদের একটা সীট দেয়া হচ্ছে স্ট্যাম্প কালেকশনের জন্য। সেখানে পুরো হল রুম জুড়ে টেবিলগুলো সাজানো রয়েছে  বিভিন্ন রকম অংক করার উপকরন দিয়ে। যেমনঃ একটা টেবিল সাজানো হয়েছে স্টোর হিসাবে। জিনিসগুলোর সাথে মূূল্যও লেখা আছে। একটা টেবিল সাজানো হয়াছে লুডুর গুটি দিয়ে। এরকম প্রতিটা টেবিল থেকে সঠিকভাবে  অংক করতে পারলে টিচার একটা করে স্টিকার দিবে সীটে । সব টেবিলের অংক শেষ হলে অংশগ্রহনকারীরা স্টিকারসহ শীটটি জমা দিবে টেবিলে। আর সেটা দেখে টিচার তাকে দেবে পুরষ্কার। তাসিনের তো আগ্রহের কমতি নেই। সে বিভিন্ন টেবিলের যোগ বিয়োগ গুন ভাগ ভগ্নাংশ শেষ করে লাইনে দাঁড়ালো শেষ টেবিলে । সেখানে দুইজন প্রতিযোগী একসঙ্গে খেলবে। টিচার মুখে মুখে অংক বলবেন টেবিলে সাজান উত্তর থেকে প্রতিযোগীদের যে প্রথম সঠিক উত্তরটি ধরবে সে নম্বর পাবে। তাসিন কেবল গ্রেড টুতে পড়ে। আর ওর প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়েটি পড়ে গ্রেড ফাইভে। টিচার দুজনকে পাঁচ পাঁচটি দশটি অংক দিল । আমি খুব অবাক হয়ে দেখলাম আমার ছোট্ট তাসিন সঠিক উওর গুলোই ধরছে। দেখালাম দুই প্রতিযোগীর পয়েন্ট সমান সমান । তাসিনের জন্য দেয়া শেষ অংকটার উত্তর একটু দূরে থাকায় ওর চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও মেয়েটি আগে ধরে । তাসিন একটু মন খারাপ করে বলে “ Next time.” 
গতকাল তাসিন স্কুল থেকে এসে আমাকে বলল “ Maa can you close your eye?” আমি চোখ বন্ধ করার পর সে স্কুলের ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করে বলল “ Open your eyes”. আমি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আমার ছোট্ট তাসিন একটা গল্প লিখেছে । নাম দিয়েছে “ Mr. Math”. আর উৎসর্গে লিখেছে “ This book is dedicated to my Mom. There are no words that can how I feel. I love it when you bring stuff for me. You are wonderful because You are you. I love you Mom. You are appreciated.
Love Muhtaseen

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন