পৃথিবীর উত্তর মেরুর সর্বউত্তরে অবস্থিত হওয়ার কারনে আমাদের এই এলাকায় শীতের প্রচন্ড দাপট গ্রীষ্মকে হার মানিয়ে তার স্থায়িত্বকালকে সংকুচিত করে মোটে কয়েকটি মাসে সীমাবদ্ধ করে রাখে।আর তাই গরমকালের মূল্যায়ন আমাদের চেয়ে বেশি কেউ করে বলে মনে হয় না। যখনই একটুখানি রোদের ঝলমলে আমেজ পাই আর চোখ ভরে দেখতে পাই নীল- সবুজের সমারোহে রং বেরং এর ফুলের খেলা, তখন নিজেদের চার দেয়ালে বন্দি করে রাখা খুবই কষ্টকর। কিন্তু কর্মব্যস্ত জীবন আমাদের মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াবার সুযোগ দেয় কোথায়। তাই ক্ষুদে বন্ধুদের দু’মাস স্কুল ছুটির সময়ে ও সপ্তাহ শেষে আমরা ব্যাকুল হয়ে উঠি একসাথে বের হয়ে এই গ্রীষ্মকালকে উপভোগ করার জন্য।সাথে চাই যথেষ্ট পরিমান পেটপূজার উপকরন ও আত্মার সাথে মিলে যাওয়া বন্ধুদের সহচার্য।

এই চিন্তাকে কেন্দ্র করেই আমরা একঝাঁক প্রত্যয়ী গত ২৫ অগাস্ট সমবেত হয়েছিলাম রূপ রসে পরিপূর্ন ছোট্ট শহর এজ্যাক্সের “রোটারী ক্লাব পার্কে” – উদ্দেশ্য “বনভোজন”। প্রসঙ্গত বলে রাখি, “প্রমিনেন্ট প্রত্যয় কানাডা” টরন্টো শহরের একটি অনন্য এবং অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন। এ সংগঠনের মূল চালিকাশক্তি হল নারী ও দেশের সংস্কৃতিকে বিদেশের মাটিতে একটি উচ্চস্থানে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তারা কাজ করে চলেছে অবিরাম।“প্রমিনেন্ট প্রত্যয় কানাডা”  আয়োজিত এই পিকনিক উন্মোক্ত ছিল সবার জন্য এবং প্রমিনেন্ট প্রত্যয়ের সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন এই পিকনিকে যারা সাদরে আপ্যায়ন করেন তাদের অতিথিবৃন্দদের। রোদ ঝলমলে প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা পিকনিক স্পটটি ছিল অসাধারন। প্রমিনেন্ট প্রত্যয়ের প্রেসিডেন্ট জনাব রফিক পাটোয়ারী এবং সেক্রেটারী মাসুদা পলির অক্লান্ত পরিশ্রমে পিকনিকটি উপভোগ্য হয় সকলের কাছে।

জিভে জল আনা ঝালমুড়ি দিয়ে আরম্ভ হয় “বনভোজনের” – “ভোজন”। সাথে ছিল মিতা রহমান ও অন্তরার তৈরী করে আনা চা। এরপর আসে দুপুরের খাবার। শহরের বিখ্যাত কিংস্টন রোড়ের উপরে অবস্থিত  “স্টার কাবাব রেস্টুরেন্ট” থেকে স্বত্যাধিকারী শাহিন ভাই গরম গরম খাবার নিজে নিয়ে আসেন। মুখরোচক খাবারে কবজি ডুবিয়ে উপভোগ করেন উপস্থিত সকলে। তারপর মিষ্টি ফিরনি দিয়ে শেষ হয় দুপুরের খাবার। আর বিকেলে প্রত্যয়ী লিটন ভাই ও তুলি আপুর সৌজন্যে আমরা পাই মজাদার তরমুজ। এছাড়াও নানারকম স্ন্যাক্স তো দিনভর ছিলই। দিনের শুরু থেকেই প্রখ্যাত আবৃত্তিকার প্রত্যয়ী কামরান করিম ও প্রমিনেন্ট প্রত্যয়ের উপদেষ্টা জনাব আখলাক হোসেনের সৌজন্যে আনা সাউন্ড সিস্টেম দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। গুলবাহার রুনার জমানো গান ও কামরান করিমের অবিরাম কৌতুক অত্যন্ত বিনোদন দেয় সবাইকে। এরপর একে একে নানা রকম খেলাধূলায় কেটে যায় সমস্ত বিকেল। ছোট্ট বন্ধুদের জন্য ছিল দৌড় প্রতিযোগিতা, নারীদের জন্য বালিশ খেলা ও পুরুষের জন্য ছিল ফুটবল। সবাই খুব উপভোগ করে খোলগুলো। সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল সকলের জন্য উন্মোক্ত নৃত্য প্রতিযোগিতা- যা দেখে সবাই খুব বিনোদিত হয়েছিল। এরপরে হয় প্রমিনেন্ট প্রত্যয়ের রেফেল ড্র। বিজয়ীরা আনন্দের সাথে উপহার গ্রহন করেন প্রধান অতিথি ও প্রমিনেন্ট প্রত্যয়ের লাইফটাইম স্পন্সর শহরের সেরা রিয়েলটর আব্দুল আওয়াল। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে প্রত্যয়ের জন্য একটি সাউন্ড সিস্টেম কিনে দেবেন। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে সমাপ্তি হয় দিনব্যাপি এই পিকনিকের।প্রমিনেন্ট প্রত্যয়ের সদস্যরা বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন উপদেষ্টা আখলাক হোসেন এবং ভাসাভী নাহিদ কালেকশনের স্বত্বাধিকারী নাহিদ আক্তারের প্রতি। পিকনিক শেষে সমস্ত এলাকা খুব সুন্দরভাবে পরিস্কার করতে সাহায্য করে ক্ষুদে প্রত্যয়ীরা। আর বেলা শেষে বন্ধুদের হাত ধরে গাছে ঢাকা ছোট্ট পার্কের রাস্তা দিয়ে পার্কিং লটে আসতে আসতে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই এমন সুন্দর একটি দিনের জন্য, সঙ্গিসাথীর জন্য, পেট ভরা খাবারের জন্য এবং প্রমিনেন্ট প্রত্যয়ের জন্য।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন