“আধখানা চাঁদ হাসিছে আকাশে
আধখানা চাঁদ নিচে
প্রিয়া তব মুখে ঝলকিছে
গগনে জ্বলিছে অগণন তারা
দু’টি তারা ধরণীতে
প্রিয়া তব চোখে চমকিছে।।”

বাংলাদেশের জাতীয় কবির লেখা অতি জনপ্রিয় অসামান্য এই প্রেমের পংক্তি জানিয়ে দেয় জাতি হিসেবে চাঁদ ও জ্যোৎস্নার প্রতি আমরা কতখানি দুর্বল। জ্যোৎস্নার রহস্যময়তা আর রূপার গুঁড়ার মত চিকচিকে রূপালী আলোর ছটা মনের গহীন কোনের অপার্থিব অনুভূতিতে দোলা দেয়। এই আবেগে বশীভূত হয়ে সুরংকণের চন্দ্রগ্রস্থ আবেগী তিন সদস্য উপহার দেন জোছনাস্নাত চমৎকার সুরেলা একটি সান্ধ্য আয়োজন “জ্যোৎস্না রজনী”।

অধিবর্ষ হওয়ার কারনে ২৯ শে ফেব্রুয়ারীর দিনটি যেমন ছিল অনন্য, ওকরিজ কমিউনিটি সেন্টারের তৈরী করা পরিবেশটা ছিল তেমনই মায়াবী। নিজেদের তৈরী করা মন্চসজ্জা ও আলোকসজ্জা থেকে শুরু করে সবার পরিহিত শুভ্রবসনে চাঁদের আভা যেন ঠিকরে পড়ছিল। আয়োজনটির পথিকৃত সুরংকণের এটিই ছিল সর্বপ্রথম পরিবেশনা।

সুরংকণ একটি বন্ধন, একটি ভালোবাসা, যার কেন্দ্রে আছে তিনটি সংগীতপিয়াসী শিল্পীমন ও তাদের পরিবার।বাংলা সংস্কৃতির প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধতাকে জাগ্রত রেখে আগত এবং বর্তমান প্রজন্মের সুন্দর মননশীলতার বিকাশ ও তাদেরকে যুগোপযোগী বাংলা সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে নিবেদিত সুরংকণ সচল রয়েছে যাদের ঐকান্তিক ও নিরলস প্রচেষ্টায় তারা হলেন,
ফারজানা কাজী
মামুনুর রশিদ
এবং ফারুক মোহাম্মদ।

উম্মে রোমানা মিতু প্রমিত বাংলা উচ্চারণে অনুষ্ঠান সন্চালকের দায়িত্ব পালন করেন। মূলত, কন্ঠ ও যন্ত্রসংগীতকে প্রাধান্য দিয়েই এ সংগঠনটির কার্যক্রম।অনুষ্ঠানটিকে তিন পর্বে সাজানো হয়েছিল, প্রথম পর্বটি ছিল কন্ঠ সংগীত, চা-চক্র ও বাক বিনিময় এবং সর্বশেষে যন্ত্র সংগীতে সুরংকণ।

চাঁদকে ঘিরে ছিল অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্ব।চাঁদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, চাঁদের সৌন্দর্য্য, জোৎস্নার আলোকে ঘিরে শিল্পীরা তাদের গানগুলো সাজিয়েছিলেন। তদুপরি মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য এবং ভাষা দিবসের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ জানানো হয় গানে গানে।

পরবর্তী গানগুলো সাজানো হয় ভালোবাসার মানুষের প্রতি আকুতি, প্রেমিকার প্রতি আকুন্ঠ ভালোবাসা এবং ভালোবাসায় বিরাজমান স্বপ্নকে ঘিরে। প্রিয়জনের স্পর্শকাতরতা এবং চাঁদের সৌন্দর্যপ্রাপ্তি বিরহে পিয়াসী মনের আকুতি ও প্রেমের সাথে চাঁদের সৌন্দর্যের সম্পৃক্ততাকে উপজীব্য করে পরিবেশন করা হয় নানা ধরনের সংগীত।পর্বটির সমাপ্তি হয় বিখ্যাত সংগীত ব্যাক্তিত্ব তালাৎ মাহমুদের গান গেয়ে।

পরবর্তী পর্বে সামাজিকতা, নৈশভোজ ও বাক বিনিময়ের পরে মামুনুর রশিদের “ডোরবো”(এক ধরনের হাওয়াইওয়ান গীটার) গীটারে ঝংকার তোলে বিখ্যাত সব গান। যন্ত্রসংগীতে মুগ্ধ হয় উপস্থিত সকলেই।

দর্শকের মাঝে উপস্থিত ছিলেন শহরের বহু গুনিজন। পরিবার পরিজন ও বন্ধুদের এই মিলনমেলায় সুরঝংকারে মুখরিত ছিল অত্যন্ত নান্দনিক এই সন্ধ্যাটি।শুদ্ধ সংগীতচর্চাকে মূলমন্ত্র মেনে নিয়ে সুরংকণের আত্মপ্রকাশের অত্যন্ত সফল ও ব্যাতিক্রমধর্মী এই পরিবেশনাটি প্রমান করে ভবিষ্যতে তারা আরও বহু সুন্দর পরিবেশনা উপহার দেবে টরন্টোকে।

(বিশেষ কৃতজ্ঞতা উম্মে রোমানা মিতুর প্রতি, নানাবিধ তথ্য দিয়ে সাহায্য করার জন্য।)

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন