ফ্লোরিডা থেকে:-

তুমি লিখেছ:
১৭ বছর বয়সে আমি কত বোকা ছিলাম…আজও সেই বোকাই রয়ে গেলাম…তবে জন্মদিনের প্রাক্কালে এই চমৎকার লেখা উৎসর্গ করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকুন।
আমি কি বলবো?

তুমিও বোকা ছিলে না আমিও চালাক ছিলাম না, ছিলাম অপরিণত । আমার ধারণা জীবনের এক পর্যায়ে এসে সবারই মনে হয় “বোকা ছিলাম, বোকাই রয়ে গেছি”। বোকা মানুষ সফল হয় কি করে? তুমি কি সফল মানুষ নও?
আমি অসফল নই।সব প্রাপ্তিই সফলতার মাপকাঠি নয়, সব অপ্রাপ্তিই
নয় ব্যর্থতার মন্দির।

রুশ দার্শনিক কজমা প্রুতকভের কাছে বিষয়টা ছিল খুব সাদামাটা: “সুখী হতে চাও? হও।”

ব্যাস! কথা অনেক বলা যায়, প্রয়োজন কি?
তবে অনুভূতির প্রশ্ন যখন ওঠে তখন প্রুতকভ আর পাশে থাকে না।
সুন্দর ও নির্মল অনুভূতিগুলোর সামনে আমরা সবাই অসহায়। কেউ কম, কেউ বেশী, এখানেই আমাদের স্বতন্ত্র পরিচয়।
আমি এখন বান্দরবানের হলিডে ইনের অর্জুনতলা রিসোর্টে একটি অনিন্দ্য সুন্দর অর্জুন কাছের সাথে কথা বলছি এবং ওর পাতায় পাতায় হাওয়ার ঝিরি ঝিরি সংগীতের ঐকতান শুনে মনে করতে চেষ্টা করছি তোমার মুখের রেখাগুলো, তোমার অবয়বের মিমিক,দৃষ্টি বিচ্ছুরিত আলো,কথা বলার দাঁড়ি কমা ও শ্বসনের যতি গুলো। হয়তো সবটাই মনে নেই , আবার সবটাই মুছে যায় নি। ৪ দশক সময় বেশ দীর্ঘ সময়, কত কিছু বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কত কাদা থেকে মূর্তি হয়েছে, কত মূর্তি জলে ভেসে কাদা হয়ে গেছে, কত দীর্ঘশ্বাস ইথারে ঘুমিয়ে গেছে মহাকালের মাদুর পেতে। তোমাকে খুঁজে পেয়ে হারিয়ে যাওয়া অতীতের একটু স্বর্ণরেণু খুঁজে পেলাম। হৃদয় আনচান করছিল সেটা এখন প্রশমিত হবে।

কাল রাতে যখন মোটেও ঘুম আসছিলো না, কক্সবাজারের বেস্ট ওয়েস্টার্ন হোটেলের দশ তলায় বসে তাকিয়ে ছিলাম সাগর ও আলো ঝলমলে প্রাসাদপ্রম ইমারতগুলোর দিকে, এক সময় দেখলাম আমার নস্টালজিতে অবগাহন  “ওডেসীর নৌকা ” তোমার চোখে পড়েছে। তখন মধ্য রাত পার হয়ে গেছে। কিছুটা ঘুম ঘুম ভাব ছিল তা কেটে গেল,ভোর ৪টা পর্যন্ত ঘুম আর এলোই না। জেট ল্যাগ নাকি অবয়বহীন কোন যন্ত্রনা বুঝতে পারি নি, তারপরে কখন যেন গিলগামেসের তন্দ্রায় আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম সুমেরের মরুতে। ৬ টায় এলার্ম বাজল, ৭ টায় রওনা দিলাম বান্দরবনের সৌন্দর্য, উপকথা ও ইতিহাস অবগাহনে।

পরে জানলাম তোমার জন্মদিন। লেখাটি তোমার চোখে পড়বে আশা করি নি, তবে ভালোই হল, এত জনমের পরে হলেও যৌবনে তোমাকে আমার ভালো লাগার পরিচ্ছন্ন অনুভূতি গুলো জানানো দরকার ছিল। তুমি জানলে।

আমি কবি, অনুভূতির পংখীরাজে ওড়াই আমার কাজ। তাই ছিলাম, তাই আছি, সুতরাং নিজেকে বোকা বলে দোষারূপ করো না; অর্ধ দুনিয়া ঘুরে ,বহু নদী, সমুদ্রে অবগাহন করে, বহু গাভীর দুধ খেয়ে, বহু চতুর ও পবিত্র মানুষ দেখেও আমি রয়েছি সেই এক তাল কাঁচা অনুভূতির পিণ্ডই।

ভালো থেকো। শুভ জন্মদিন।

ফেব্রুয়ারী ৫,২০১৬

“খুব অনুভূতিপ্রণ মানুষগুলো হিমকণার মত, একটু উষ্ণতা পেলেই গলে যায়”- কজমা প্রুতকভ

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন