Bangladesh_Grunge_Flag_by_think0

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় চাকুরীর সুবাদে ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে অনেকবার। বিদেশে যে দুটি বিষয় সব সময় নজরে আসতো, তার একটি হলো সুশৃংখল নাগরিক জীবন, এর সুযোগ সুবিধা এবং অন্যটি হলো নিরাপত্তাবোধ। নিজের এই অনুধাবনের সাথে যোগ হয় সামাজিক এবং পারিপার্শিক তাগিদ। ফলে সিদ্ধান্ত নেই অভিবাসনের। আজ মনে পড়ে কানাডা যাওয়ার সিদ্ধান্ত শুনে আব্বা আম্মার নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকা এবং অনেক কষ্টে অশ্রু সংবরণ করে বলা, “তোমরা সুখে থাকলেই আমরা খুশি।”

২০০৫ সালে যখন টরন্টোতে পাড়ি জমাই, তখন চোখে ছিল অনেক আলোর ঝলকানি, নতুন দেশে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর প্রত্যয়। বারো বছরে গড়ে তোলা নিজের পেশাগত জীবনের উন্নয়নের সম্ভাবনাকে ছাপিয়ে পারিবারিক সম্মৃদ্ধি তখন মুখ্য হয়ে দাড়ায়। শুরু হয় স্বনির্ভরতার নতুন এক জীবন, দেখা দিতে শুরু করে স্বপ্ন এবং বাস্তবতার ব্যপক ফারাক। বলতে দ্বিধা নেই, অনেক রকমের প্রতিকুলতার মধ্যে কেটেছে প্রথম কয়েকটি বছর। বিশেষ করে নিজের কাঙ্খিত কর্ম ক্ষেত্রে প্রবেশ ছিল খুবই দুরূহ। প্রতি মুহুর্তে উপলদ্ধি করতাম, নিজের অপছন্দের কাজ করে  জীবনের ভার বয়ে বেড়ানোর মত কষ্টকর আর কিছুই নেই। সময়ের সাথে সাথে কর্ম জীবনেও পরিবর্তন এসেছে। আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানী, মা বাবার দোয়া এবং স্ত্রীর নিরন্তর সহায়তা ও অনুপ্রেরনায় অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে সামগ্রিক জীবন এখন অনেকটাই স্থিতিশীল, কাজ ও করছি নিজের ইপ্সিত কর্মক্ষেত্রেই। আর কিছু না হউক, প্রবাসের জীবন ধারা আমাদেরকে আত্মনির্ভরশীল হবার অনেক উপাদান যোগান দেয়। নিজের কাজ নিজে করার মধ্যে ও যে এক ধরনের পরিতৃপ্তি আছে তা প্রবাসে না থাকলে হয়ত উপলদ্ধীই করতে পারতাম না। পরিবর্তন অনুভব করি আর্থিক এবং ধর্মীয় অনুভূতিতেও । সর্ব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ এবং শান্তিতে, নিরাপদে থাকার প্রার্থনা করার তাগিদও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে এই প্রবাস জীবন। আর ও একটি বিষয় যা গভীর ভাবে মনকে নাড়া দেয়,  তা হলো জন্মভূমির প্রতি টান। আসলে আমরা সবাই হৃদয়ে ধারণ করি এক টুকরো বাংলাদেশকে। ফলে চেতন, অবচেতন মনে উঠে আসে আপনজনদের স্মৃতি, দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হই, আবার দেশের সামান্য অর্জনেও আন্দোলিত হই মনে ও মননে।

দশ বছর পরে আজ যখন খুঁজে ফিরি স্মৃতি মাখা, ফেলে আসা দিন অথবা হিসেব মিলাই ভালো মন্দের, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির, তখনও  হৃদয়ের গহীন কোণে বেজে উঠে রুনা লায়লার কন্ঠে শোনা প্রিয় গান,

” স্মৃতি ঝলমল সুনীল মাঠের কাছে,
পানি টলটল মেঘনা নদীর কাছে ,
আমার অনেক ঋণ আছে ,
ঋণ আছে ।”

এক জীবনে এই ঋণ কি কখনো পরিশোধ করা যায় ?

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন