মানডাল, নরওয়ে থেকে:-

বাংলাদেশের ছোট্ট এক গ্রামের ছেলে আমি , আজ পুরো ম্যান্ডাল শহরের মানুষ আমাকে যে সম্মান দেখায় সে সম্মান যদি আমি আমার গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে অর্জন করবার সামান্যতম সম্ভাবনা থাকতো , আমি যে কাজ করি সে কাজের যদি সামান্যতম সফলতার সম্ভাবনা থাকতো তবে হয়তোবা দেশ ছেড়ে আসা লাগতোনা। আজকে সকালে লেটার বক্স খুলে দুটি আমন্ত্রণ পত্র পেলাম, একটা ম্যান্ডাল সিটি কর্পোরশন থেকে এবং একটা মান্ডালের সবচেয়ে বড়ো হাই স্কুল থেকে। ম্যান্ডাল সিটি কর্পোরেশন সারা মান্ডালের বিদেশিদের মধ্যে থেকে আমাকে নির্বাচিত করেছে তাদের সম্মিলিত এক মিটিংয়ে যোগ দেবার জন্য কেননা তারা মনে করে আমিই মান্ডালের একমাত্র বিদেশী যার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে,, আর মান্ডালের বড়ো হাই স্কুল থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছি সামারের পর যখন সবাই ক্লাসে ফিরবে তখন হাই স্কুল শেষ করতে যাওয়া তরুণদের-তরুণীদের আগামীদিনের প্রস্তুতির জন্য মোটিভেটেড করবার জন্য মোটিভেশনাল স্পিচ দিতে ।

মানডাল শহরের ২ বড়ো সমস্যা হচ্ছে শহরটা নরওয়ের মধ্যে মাদক সেবন ও বিক্রির ক্ষেত্রে সবচেয়ে পরিচিত শহর গুলোর একটা এবং এখনো এ শহরের মানুষ তুলনামূলক ভাবে নরওয়ের অন্নান্ন শহরের মানুষদের থেকে কিছুটা বেশি পরিমানে রেসিস্ট। গত ১০ বৎসর আগে পর্যন্তও মান্ডালের লোকেরা ম্যান্ডাল শহরকে সাদা লোকদের শহর বলে পরিচয় দিতো এবং গর্ববোধ করতো। তবে সময় পাল্টে গেছে, এখন আর সাদাদের শহর বলে যে বড়াই ছিল তা অস্ত যেতে শুরু করেছে এবং এদেরও মন মানুষিকতার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। আজ হোক কিংবা কাল হোক ম্যান্ডাল সিটি কর্পোরেশন থেকে আমন্ত্রণ পাবো তা জানতাম, কেননা সে আভাস অনেক আগেই পেয়ে ছিলাম, ওদের পলিটিশিয়ানদের অনেকেই এখনো চরম পর্যায়ের রেসিস্ট এবং ইমিগ্রেশন বিরুধী। আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর একটাই কারণ ওরা ইমিগ্রেশন বিরুধী পলিটিশিয়ানদের সামনে আমাকে উদাহরণ হিসাবে উপস্থাপন করতে চায়, মান্ডালের সামাজিক চিন্তা ধারার উন্নয়নে গত ২ বৎসরে আমার যে প্রচেষ্টা এবং মান্ডালের সামাজিক উন্নয়নে এর যে সফলতা তা সবার সামনে বিশ্লেষণ করতে চায় । তবে সিটি কর্পোরেশনের আমন্ত্রনের চাইতেও হাই স্কুল থেকে পাওয়া আমন্ত্রণে আমি বেশি খুশি, তরুণ প্রজন্মের সামনে কথা বলতে পৰ, ওদেরকে ভালোর দিকে, আলোর দিকে এগিয়ে যেতে মোটিভেটেড করতে পারাটা অনেক ভালো একটা কাজ বলে আমি নিজে মনে করি। কারণ সামান্য একটু সুচিন্তাধারা, সামান্য দিকনির্দেশনার অভাবের কারণে একজন তরুণ জীবনে সফল হবার পথ থেকে পিছলে পড়তে পারে এবং সে পিছলে পড়ার কারণে সে তার পরিবারের জন্য,সমাজের জন্য, দেশের জন্য সারাজীবন বোঝা হয়ে থাকতে পারে।

আমরা অনেক বাংলাদেশিরাই অনেক ক্ষেত্রে অনেক ট্যালেন্টেড , দেশে তা দেখাবার সুজুগ পাইনা বলেই এবং দেশে তার যথাযথ সম্মান পাইনা বলেই অনেক ক্ষেত্রে আমরা ভিনদেশি হই। বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে যথাযথ পরিকল্পনা নিতে হবে , মেধাবীদের ধরে রাখবার জন্য সঠিক পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন