আমরা অনেক কঠিন কথা শুনি, বুঝি এবং অনেক সময় মানিও বটে, কিন্তু ফিরোজ শাইয়ের গানের প্রথম লাইনের ওই কথাটি যেন কেউই বুঝি না বা মানতে রাজি না। বরং আমাদের যেখানে এক সেকেন্ডের ভরসা নেই সেখানে আমরা যেন ধরে বসে থাকি এক কোটি সেকেন্ডের ভরসা অর্থাৎ আমরা যেন যুগে যুগ ধরে বেঁচে থাকবো। আর তাইতো পাল্লা দিয়ে করতে থাকি যা ইসছা তাই। অথচ এইটা বুঝতে চাইনা যে আমি কালকে সকালে উঠে যে সূর্যটা দেখবো, বা আমি নিজে বা আমার আত্মীয় স্বজ্জন এবং বন্ধু বান্ধবের কারোর মৃত্যু খবর শুনবনা সেটার বিন্দু মাত্র নিশ্চয়তা নেই।
যাহোক আমার কথাগুলি লেখার কারণ গতকালের একটি খবরকে কেন্দ্র করে। আমার টরন্টোবাসি বন্ধু অনিকের মা একটু অসুস্থ হওয়াতে উনি কিছুদিন আগে বাংলাদেশে যান। মায়ের দ্রুত সুচিকিৎসার জন্য তাকে বগুড়া থেকে আগেই ঢাকা এনে রাখেন তাই যাওয়ার পরের দিনই ডাক্তারের কাছে নিয়ে সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হন উনার তেমন মেজর কোনো সমস্যা নেই। এই খবরে উনারা সবাই বেশ স্বস্তি ফিল করেন। এদিকে বড় ছেলে দেশে যাবেন, সে জন্য মা তার পছন্দের অনেক কিছু রান্না করে ফ্রিজ ভোরে রেখে দিয়েছেন। ছেলেও খুশি যে মার যখন তেমন কোনো সমস্যা ধরা পরে নি এবং চিকিৎসা যখন উনি দেশে যাওয়ার শুরুতে করানো তাই বাকি দিনগুলি বেশ মায়ের সাথে ভালোই কাটানো যাবে।
সারাদিন মাকে নিয়ে ভালো সময় কাটিয়ে এবং দেশে থাকা আগামী দিনগুলি সুন্দরভাবে কাটানোর স্বপ্ন নিয়ে উনারা ঘুমিয়ে যান। কিন্তু ওই যে ফিরোজ শাইয়ের গান, এক সেকেন্ডের নাই ভরসা। তাই হলো, কোনো ধরনণের পূর্ব লক্ষণ বা কমপ্লিকেশন ছাড়াই সকালে উঠে আমার বন্ধুটি তাকে ডাকতে গিয়ে দেখলেন উনি আর ঘুম থেকে উঠছেন না। এই, এর পর মনের শান্তির জন্য ডাক্তারের কাছে নেওয়া, কিন্তু তিনি আর ফিরে এলেন না। এই টুকু শোনার পর আমার মনে হয় আপনাদেরও আর কিছু ভাবতে ইচ্ছা করছে না, তেমনি আমারও আর কোনো ভাষা নেই। যাহোক এখানেই শেষ না।
বন্ধুটি এখানে একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার। সেখানে ফোন করে উনি উনার কাজে থেকে আরো কিছু ছুটি বাড়ালেন। উল্লেখ যে, উনি ভাবি এবং বাচ্চাকে টরোন্টোতে রেখেই গিয়েছিলেন কারণ ছেলের ইস্কুল। এটা সপ্তাহ দুই আগের কথা, আমি গতকাল তাকে বাংলাদেশে ফোন করেছিলাম সে কবে কানাডা আসবে সেটা জানতে। কথা হলো, উনি তখন বললেন ভাই আমার তো আর একটা disaster . আমি বললাম কি। উনি বললেন গতকাল সকালে আমার শশুর  মারা গেছেন। শশুর অবশ্য একটু অসুস্থ ছিলেন। এক শোক এবং আনুষাঙ্গিক ঝামেলা সমাধানের শেষ না হতেই আর এক ট্রাজেডি। যাহোক তাকে দেশে বসেই ভাবীর টিকেটের বেবস্থা করতে হলো এবং সাথে সাথে আঙ্কেলের আনুষাঙ্গিক কাজ কর্মও করতে হস্ছে। এক্ষত্রে উনি এখানকার বন্ধু বান্ধবের কাছে কৃতজ্ঞ তাদের উনার অবর্তমানে ভাবি এবং বাচ্চাকে সহয়ওতা করার জন্য। ভাবি আগামী কালকে দেশে যাবেন।  আপনারা সবাই উনাদের মৃত বাবা মায়ের জন্য দোআ করবেন, আর সাথে সাথে আমরা যেন ভুলে না যাই ” এক সেকেন্ডের নাই ভরসা” এবং চেষ্টা করি যতটা সম্ভব ভেদাভেদ ভুলে সবাই সবাইকে accommodate করে চলতে।
আপনাদের জন্য ফিরোজ শাইয়ের পুরোনো গানের লিংকটি দিলাম।
মুকুল

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন