লেখকের কথা
হোমলেস নিয়ে আমার ধারাবাহিক লেখাটি প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে । এটিকে আর আপাতত প্রকাশ করছি না । হটাৎ, কি মনেকরে, রাস্তার মানুষদের নিয়ে লিখতে যেয়ে ভাবলাম সমাজের একেবারে উঁচু তোলার মানুষগুলিকে নিয়ে লিখলে কেমন হয় ? বর্তমান প্রেক্ষাপটে, আমার কাছে মনে হলো, এই উঁচুতলার মানুষ গুলির জীবন ধারা, মূল্যবোধ ইত্যাদি আমাদের মতো সাধারন মানুষদের নিশ্চয় জানার অধিকার আছে । আর সেই অধিকার নিয়েই সাহিত্যের রং তুলিতে কল্পিনিক ভাবে একজন প্রবাসী টিপিকাল উঁচুতলার বাংলাদেশীর চরিত্র কল্পনা করে আরেকটি ধারাবাহিক লেখার চেষ্টা করলাম ।

জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীনউদ্দিন.
রেজিস্টার্ড সোস্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার, টরেন্টো, কানাডা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২০
————————————–

ফেব্রুয়ারি মাসে টরেন্ট শহরে সচারচর প্রতিবার যতটা ঠান্ডা পরে, এবার বোধকরি অতটা ঠান্ডা নেই, তুষারপাতও তেমন একটা নেই। শহরের লরেন্স রোডের উপর জোৎস্না ম্যানশন নামক বিশাল অট্টালিকায় অনেকটা হৈ হৈ রৈ রৈ অবস্থা । শনিবারের সকাল পৌনে এগারোটা বাজে । আর মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই অর্থ্যাৎ ১৪ ই ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রবাসী জনাব মিজানুর রহমান সাহেবের এই অট্টালিকাতে মহা ধুম ধামের সাথে এক বিশাল পার্টি হতে যাচ্ছে । মিজানুর রহমান, ম্যানেজার মোত্তালেব সাহেবকে নিয়ে ড্রয়িংরুমের সাথে লাগানো অফিস কক্ষে শুক্রবারের এই পার্টি বিষয়ে বিশেষ ফলো-আপ মিটিং করছেন । মিটিংয়ে মিজানুর রহমানের স্ত্রী রুপার ও ছেলে মেয়েদেরও থাকার কথা ছিল কিন্তু মিসেস রুপা টেলিফোনে বাংলাদেশে সম্ভবত এক কলেজ জীবনের বান্ধবীর সাথে জমিয়ে আলাপ করছেন, তাই মিটিংয়ে থাকা হয় নি । বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে মেয়ে অয়ন ও অদিতি দুজনেই এখনো বিছানায় ঘুমাচ্ছে । অগত্যা, মিজানুর রহমান শুধু ম্যানেজার মোত্তালেব সাহেবকে নিয়েই মিটিং টি সারতে হচ্ছে ।

প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের সামনে দেওয়া কফি হীম শীতল হয়ে গোল টেবিলের এক কোনায় পরে আছে । এর অর্থ হচ্ছে, মিজানুর রহমান খুব সিরিয়াস টাইপের আলোচনায় ব্যস্ত। মিজানুর রহমান এর কাছে একটি বিশেষ কারণে এই পার্টিকে খুব গুরুত্ব দিতে হচ্ছে । মিজানুর রহমান চাচ্ছেন এক ঢিলে একাধিক পাখি মারতে। এক, ইদানিং, টরেন্ট শহরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশ থেকে পালিয়ে আসা অবৈধ উপায়ে সম্পদশীল ব্যাক্তিদের নিয়ে বেশ হৈচৈ শুরু করেছে । তাই, কাউন্টার হিসাবে একটি জমকালো পার্টি করে প্রবাসে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে একটি পজিটিভ ইমেজ তৈরী করতে হবে । দুই, স্ত্রী রুপার মন বেশ খারাপ, তার প্রিয় জিসান গতমাসে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে । শুধু রুপা কেন , বাড়ি শুদ্ধ সবারই মন বেশ খারাপ । তাই , পরিবারে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে ৩. এবারে ভালোবাসা দিবস পড়েছে শুক্রুবারে একেবারে পহেলা ফাগুনে । সুতরাং সবাই মোটামুটি উৎসব মুখী থাকবে ।

জিসান কে মিজানুর রহমান গত এক বছর আগে এক ইংরেজ বন্ধুর কাছ থেকে দত্তক নিয়েছিলেন । এই বাড়িতে আসার পর থেকে জিসান অল্প কিছুদিনের মধ্যে বাড়ির প্রত্যেকের মন জয় করে ফেলে । বিশেষ করে রুপা জিসানকে একেবারে নিজ সন্তানের মতোই দেখে আসছিলো। সেই জিসানের মৃত্যুতে তাই রুপার শোকের মাত্রা ছিল প্রবল । জিসান হচ্ছে পমেরেনিয়ান টাইপের কুকুর । এরা সাইজে অত্যন্ত ছোট ও সারা গায়ে নরম তুলার মতো লোমভর্তি। প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় এদের ওজন মাত্র দুই থেকে সাড়ে তিন কেজির মতো হয় । এরা বেশ চালাক প্রকৃতির, অত্যন্ত সোশ্যাল , আমুদে ও বন্ধুত্বপরায়ণ হয়ে থেকে । এদের উৎপত্তি মূলত: মধ্য ইউরোপের পোল্যান্ডের উত্তর পশ্চিম সাইডে এবং জার্মানির উত্তর-পূর্ব দিকে । দেখতে অনেকটা জার্মানি স্প্লিটজ এর মতো হলেও ওদের চেয়ে সাইজে ছোট । জেসনের মৃত্যুতে রুপা সহ সবার মাঝে বাড়িতে যে শোকের ছায়া পড়েছে সেটা দূর করতে এবারের এই পার্টির আয়োজন অনেকটাই ভালো প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে ।

“মোত্তালেব সাহেব?”
— “জি স্যার, বলুন!
” আমাকে একটু খুলে বলবেন, পার্টির অগ্রগতির ব্যাপারে, কতদূর কি হলো ?”
মোত্তালেব সাহেব তোতাপাখির মতো জি স্যার জি স্যার বলে হ্যান্ড ব্যাগ থেকে নোট বই বের করে পড়তে থাকে :
স্যার, লিস্ট মোতাবেক কাজ অনেকদূর এগিয়ে চলেছে ।
১. বরাবরের মতো এবারের পার্টির একটি সুন্দর নামকরণ দেয়ায় চেষ্টা চলছে । তবে এবারের পার্টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে স্থানীয় বাংলা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পার্ট-র জন্য উপযুক্ত নামকরণ এর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে: আজি এ বসন্তে প্রবাসী আড্ডা ; এসো এ বরফ ও বসন্তে হারিয়ে যাই ; প্রবাসী বাসন্তী সন্ধ্যা ।
২. দুই শত সাঁইত্রিশ জন আমন্ত্রিত অতিথিদের সবাইকে দুইবার করে ইতিমধ্যে দাওয়াত কনফার্ম করা হয়েছে
৩. আমন্ত্রিত সকল ম্যাডামের জন্য অর্থ্যাৎ ১৭৭ জন ম্যাডামের জন্য বাংলাদেশ থেকে লাল পেড়ে বাসন্তী
রঙের শাড়ি, ও স্বর্ণের টিপ্ অর্ডার দেওয়া হয়েছে । দুই শত এগারোজন আমন্ত্রিত স্যারের জন্য আড়ং থেকে সঠিক সাইজ অনুযায়ী বাসন্তী পাঞ্জাবির অর্ডার দেওয়া হয়েছে । টাকাপায়সা অর্ধেক দেওয়া হয়েছে। জিনিস আসার পরে বাকি টাকা পরিশোধ করার কথা । আশা করা হচ্ছে আগামীকালই চালান চলেআসবে
৪. ফখরুদ্দিন বাবুর্চির ছেলের পরামর্শক্রমে ইসাহাক বাবুর্চির পাসপোর্ট, কাগজপত্র রেডি করে কানাডিয়ান ভিসার জন্য আবেদন করা হয়েছে । ভিসা না হলে, মন্ট্রিয়লে অনেক বছরের অভিজ্ঞ আশফাক বাবুর্চিকে রেডি থাকতে বলা হয়েছে।
৫. অটোয়া থেকে বিখ্যাত ভারতীয় ম্যাজিশিয়ান মি . নরেন্দ্রনাথ সাহেব কে কনফার্ম করা হয়েছে । উনার দুই রাত টরেন্টোতে থাকার জন্য হোটেলে বুকিং দেওয়া হয়েছে ।
৬. নিউ ইয়র্ক থেকে জনপ্রয় একটি সংগীত বাংলাদেশী ছেলে মেয়েদের নিয়ে ব্যান্ড কে কনফার্ম করা হয়েছে । উনাদের থাকার ব্যাবস্থাও একই হোটেলে করা হয়েছে।
৭. খাবারের মেনুর ব্যাপারে, ম্যাডাম, ছোট আপা ও ছোট স্যারের সাথে এখনো আলাপ চলছে, এখনো চূড়ান্ত করা হয় নি।
8. টরেন্টোতে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বিশেষ অবদানের জন্য উদীয়মান কথা সাহিত্যিক কবি জনাব রেজাউল করিম সাহেবকে সংবর্ধনা বিষয়ক প্রস্তুতি চলছে । উনার জন্য একটি স্বর্ণের মেডেল এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। উনার সাথে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে । উনি প্রথমে সম্মতি না দিলেও পরবর্তীতে অনেক সাধাসাধির পর, পরিবারের সাথে কথা বলে অবশেষে রাজি হয়েছেন ।

মিজানুর রহমান কিছুটা আসস্থ হয়ে একটু কপট রাগ দেখিয়ে বলে , “সবই বুঝলাম, মোত্তালেব সাহেব, ভালোই এগুচ্ছেন, কিন্তু খাবারের ব্যাপারটি কিন্তু আজ কালের মধ্যেই চূড়ান্ত করতে হবে ” ।
মোত্তালেব সাহেব মাথা নিচু করে অত্যান্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে, ” জি স্যার, আগামী কালের মধ্যেই ইনশা আল্লাহ ফাইনাল করে ফেলবো”.
– “আর শুনুন, পার্টির নামকরণের ব্যাপারে, তিনটির একটি নাম ও আমার পছন্দ হয় নি , তবে হাতে সময় যেহেতু বেশি নেই, দ্বিতীয় নামটি কে যেন বললেন ?”
মোত্তালেব সাহেব তাৎক্ষিণক স্যারকে স্বরণ করে দেয় :
“স্যার, দ্বিতীয় নামটি ছিল -এসো এ বরফ ও বসন্তে হারিয়ে যাই
– হ্যা, এটাই ফাইনাল করেন, আর ব্যানারে সুন্দর করে বাংলায় এটি লিখে ছবিতে বাংলাদেশের টিপিকাল বসন্তের ছবি ও এখানকার বরফের দৃশ্যের ছবি, কালারফুল কিছু ফল সিজনের ছবি জুড়িয়ে দিতে বলবেন” ।

মিজানুর রহমান, ম্যানেজার মোত্তালেবের উপর যথেষ্ট আস্থা আছে । ম্যানেজার মোত্তালেব অত্যন্ত পরিশ্রমী ও বিশ্বাসী মানুষ, বয়োস পঞ্চাশে উপরে । মিজানুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শরাফতের রেফারেন্সে মোত্তালেব সাহেবকে ম্যানেজারের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে । মোত্তালেব সাহেব রিফিউজি হিসাবে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা হয়ে গত তেরো বছর ধরে স্বপরিবারে টরেন্টোতে বসবাস করছেন। মোত্তালেব সাহেব ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে সমাজ কল্যাণ অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে ব্র্যাকে বগুড়া শহরে ম্যানেজারের চাকুরী করতেন। বি সি এস পরীক্ষায় ভাইবা পর্যন্ত গিয়ে ছিলেন। বি সি এস পরীক্ষায় উর্তীর্ণ না হয়ে বিদেশে পারি জমানের চেষ্টা করেন। পরে, বন্ধুদের সাথে এক দালাল ধরে আমেরিকা হয়ে পরে কানাডায় চলে এসেছে । এখানে কাগজ পত্র প্রায় বসার পাঁচেক আগেই হয়ে গেছে। প্রকৌঁসুলী মিজানানুর রহমান মোত্তালেব সাহেবকে পছন্দ হয়েছে কারণ সাধারণত এধরণের প্রবাসীরা অনেক পোড় খাওয়া টাইপের হয়ে থাকে । এরা ঝানু উকিলের সাথে উঠাবসা করে অনেকতা চৌকস ধরেন হয়ে উঠে । এ ছাড়া, মোত্তালেব সাহেবের চারিত্রিক গুণাবলীও মিজানুর রহমান কে অভিভূত করেছে । ম্যানেজারের পার্মানেন্ট নিয়োগ দেওর আগে মিজানুর রহমান বিভিন্নভাবে গোপনে মোত্তালেব সাহেবের চরিত্রের পরীক্ষা নিয়েছে । সাধারণত স্মোকাররা সিগারেটের উপর বিশেষ দুর্বল থাকে। মিজানুর রহমান জানতেন মোত্তালেব সাহেব সিগারেট খায়। অনেকদিন কথাচ্ছলে সিগারেটের প্যাকেট অফিস কক্ষে রেখে চলে এসেছেন। পরে গুনে দেখেছেন প্রেত্যেকটি সিগারেটের সংখ্যা ঠিক আছে। এ ছাড়াও , মিজানুর রহমান অনেকদিন ডলারের বান্ডিল টেবিলে রেখেছে । পরে গুনে দেখে একটি ডলারও এদিক ওদিক হয় নি । শুধু তাই না, একবার মিজানুর রহমান এ দেশের এক সুন্দরী রিয়্যাল এস্টেটের এজেন্টের সাথে দুই দিনের জন্য শহরের বাহিরে জমি কেনার একটি প্রজেক্টের জন্য পাঠিয়ে ছিলেন । পরে, মহিলাটির সাথে কথা হয়েছে. মোত্তালেব কনরকম অসৌজন্যমুলুক আচরণ মহিলাটির সঙ্গে করেননি। সুতরাং, মোত্তালেব সাহেবকে পার্টির দায়িত্ব দিয়ে মিজানুর রহমান কিছুটা নিশ্চিন্ত রয়েছেন।
মিজানুর রহমানের সম্পদের পরিমান যে কত সেটা বুঝতে হলে হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা সম্পর্কে পুরাপুরি কনফিডেন্ট থাকতে হবে। নতুবা, হার্ট আটকের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। প্রবাসে, ইমিগ্রান্টরা যখন বেঁচে থাকার সংগ্রামে নিম্ন আয়ের চাকুরী পাওয়ার জন্যেও লাইন ধরে , সেখানে জয়পুর হাট পাইলট স্কুলের মিডিয়াম টাইপের ছাত্র মিজানুর রহমান কাড়ি কাড়ি টাকা দেশ থেকে এনে এই কানাডা শহরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মালিক । বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এর অধীনে কর্মরত জনাব মিজানুর রহমান এত অল্প সময়ে এত এত বিস্তর সম্পদের মালিক যে কিভাবে হলেন তা এক বিরাট রহস্য।

জোৎস্না ম্যানশন নামকরণ করা হয়েছে মূলত: মিজানুর রহমান সাহেবের শ্বাশুড়ির নাম অনুসারে । স্ত্রীকে খুশি রাখার মিজানুর রহমান সাহেবের এ আরেক অভিনব কৌশল। নিজের মাকে বাদ দিয়ে শ্বাশুড়ি মা কে নিয়ে ম্যানশনের নামকরণ মানে এই না মিজানুর রহমান মা কে ভালোবাসতেন না । মিজানুর রহমান আসলে মা কে প্রচন্ড ভালোবাসতেন ও ভয় করতেন। কিন্তু, মা মিজানুর রহমানের অসৎ উপায়ে অর্জন করা টাকা পয়সা স্পর্শ করতেন না । একবার, দেশে থাকতে রোজার সময় মিজানুর রহমান এর সাধ হলো জয়পুর হাটে যেয়ে মা বাব, ভাই/বোন দের সাথে ইফতারি করবেন। যা ভাবা তাই কাজ। মিজানুর রহমান ঢাকা থেকে রকমারি ফলমূল, স্পেশাল হালিম সহ আরো রং বেরঙের ইফতারির সামগ্রী নিয়ে বিশেষ হেলিকপ্টারে করে বাবার বাড়ি গেলেন। স্কুল মাঠে হেলিকপ্টার ল্যান্ড করলো। এলাকার চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে , রাজনীতিবিদ বৃন্দ সহ শত শত মানুষ মিজানুর রহমানকে স্কুল মাঠে ঘিরে বাড়ি অবধি নিয়ে গেলো । সে এক অভনব দৃশ্য । মিজানুর রহমানের বাবা হাইস্কুলের রিটার্ড বিজ্ঞানের শিক্ষক ফজলার রহমান দুধের মতো সাদা পাজামা /পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে ছেলের জন্য অধীর আগ্রহে বসে ছিলেন । মা হাজেরা বেগম চোখে ঠিক দেখতে পারে না। তবু ছেলের আসার কথা শুনে কাজের মানুষ দিয়ে ছেলের জন্য ছেলের পছন্দ করা খাবার হাঁসের মাংস, খিচুড়ি ইত্যাদি রান্না করে রেখেছে। বিকাল থেকেই বাড়ির উঠানে টেবিল পেতে ঢাকা থেকেনিয়ে আসা ইফতারির যাবতীয় সামগ্রী সেজে রাখা হচ্ছে । সন্ধ্যার আগে থেকেই মিজানুর রহমকে ঘিরে বয়স্ক বাবা মা , ভাই বোন সবাই ইফতারির সামনে নিয়ে আজানের অপেক্ষায়। বাবা, সূরা তেলোয়াত করে সুর করে মোনাজাত ধরেছেন। সবাই , আমিন আমিন বলছেন । বাবা ফজলার রহমান লম্বা মোনাজাত করেই চলেছেন, ” হে আল্লাহ আমার ছেলের রুজি রোজগারে বরকত দাও, সে যেন হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জন করে, তাকে তুমি তৌফিক দেন করো। কথা বলতে বলতে বৃদ্ধ বাবার গলা ধরে এসেছে, চোখ বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে । কান্নায় মা এর শরীরী কেঁপে কেঁপে উঠছে । একসময়ে, মুয়াজ্জেনের আজানের
ধ্বনিতে ছেলে মেয়েদেরও সবাই ঢাকা থেকে নিয়ে আসা বাহারি ইফতার খেয়ে রোজা ভাঙলেন, কিন্তু মিজানুর রহমান ঠিকই খেয়াল করলেন , বাবা মা তার ঢাকা থেকে নিয়ে আসা ইফতারির সামগ্রী ছুঁয়েও দেখলেন না।

(চলবে)

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্তর্জাতিক গবেষণা-জার্নালে অপূর্ব শর্মার বীরাঙ্গনা কথা গ্রন্থের উপর প্রবন্ধ প্রকাশ
পরবর্তী নিবন্ধহেরে যাওয়াদের গল্পে কোনো প্রাপ্তি নেই..
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন