গন্তব্য বোনের বাড়ি। ওয়ারেন থেকে ডেট্রয়েট রিভারের তলদেশ এর টানেল পেরিয়ে রাস্তার উপর ইমিগ্রেশন চেকপয়েন্ট বক্স। বক্সের ভেতর একজন কানাডা ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্মকর্তা। জানালা খুলে হাসি দিয়ে বললো,”শুভ সকাল, তোমরা কেমন আছো”? গাড়িতে বসেই পুত্র দুটো পাসপোর্ট এগিয়ে দিয়ে বললো, বাবা টরেন্টো যাবে, আমি উইন্ডসর থেকে বাবাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে আবার এক্ষুণি ফিরে আসবো। ইউএসএ পাসপোর্ট বা গ্রীন কার্ড থাকলে কানাডায় পোর্ট এন্ট্রি ভিসা, যাত্রীর নিজস্ব গাড়ি সহ। জাস্ট তিরিশ সেকেন্ড, পাসপোর্ট চেক করে ফিরিয়ে দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা ।
আবারো সুন্দর করে হেসে বললো, তোমার দিন সুন্দর হোক, যাত্রা শুভ হোক।

স্বদেশ বিদেশ এমনকি ইউএস পুলিশকেও এতো সুন্দর করে কখনো হাসতে দেখিনি। মনে হয় যেদিন ওরা পুলিশ হয়, সেদিন থেকে হাসতে মানা। কথায় বলে শান্তির দেশ কানাডা। আসলেই এরা শান্তি প্রিয় জাতি । এদের প্রধান মন্ত্রীকেও আইন অনুযায়ী এক’শ ডলার জরিমানা দিতে হয়।

উইন্ডসর রেল স্টেশন। পুত্র ফিরে গেছে, টরেন্টো গামী ট্রেনে বসে আছি। যাত্রীরা একে একে উঠছে। ওদের দেখে দিলু মিয়াকে মনে পড়ে গেলো। দিলু মিয়া ছিলো আমার নানা বাড়ির আধাপাগলা পেটেভাতে ফুটফরমাইশ খাটা কাজের লোক। বিয়ে সাদি করেনি,  আধাপাগলাকে কে মেয়ে দিবে? বিয়ের কথা জিজ্ঞাসা করলেই বলতো, “বিয়ে করলে তো কাপড় দিতি পারবো না নে। একখান কাপড় বারো হাত, টাকা পাবো কনে”? আহারে!! দিলু মিয়া তুমি পশ্চিমে জন্ম নিলে, বারো হাত কাপড়ের চিন্তায় তোমার বিয়ে আটকে থাকতো না।
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সব দেশের ট্রেনের জানালা দিয়ে একই দৃশ্য চোখে পড়ে। দু’ধারে ফসল ভরা মাঠ, মাঠের অদূরে ছোট ছোট গ্রাম। আবার কখনো নদী খাল বিল আর টানা বনাঞ্চল। মাঝপথে কতো অজানা অদেখা স্টেশন, কত বর্ণের, ধর্মের, ভাষার, আকারের মানুষ। বিধাতা তার সৃষ্টিকে কি অপরূপ সাজে সাজিয়েছেন!!
অনির্ধারিত সময়ের জীবনে তার কতটুকুই বা আমাদের দেখার সুযোগ হয়?
সামান্য কাছিম সেও তিন’শ বছর বাঁচে,
অথচ আমাদের গড় আয়ু মাত্র ষাট বছর।
আফসোস!!!!!!

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন