ঐ জীবনের প্রথম আর ঐ জীবনের শেষ। মানুষ যে কত রকমের কথা রটাতে পাড়ে সেদিন প্রথম জানতে পেরেছিলাম। চুপটি বাঁদরামি কে না করে বলেন তো??? সবাই টুকটাক একটু আধটু করেই থাকে। সমস্যা টা কোথায় দাঁড়ায় জানেন… সমস্যা টা হয় তখনই যখন ধরাটা খায়…
যাক ওমন ধরা খাওয়া আর পিটুনি কে না খায়… কেউ কম আর কেউ বেশি। আমি মধ্যম পজিশনের ব্যক্তি।
মজার বিষয় হলো বাসার লোকজনের অবস্থা ঠিক এমন,,,
চিলে কান নিয়ে গেছে। আর ওমনি গন সঙ্গীত শুরু।

কেউ দেখে নাই কিন্তু, নালিশ বাসায় এসেছে ওমনি গন সভা শুরু পরিশেষে পরিনতি রাতের খাওয়া হবে সবার সামনে ভাত আর নিরামিষ। সবাই খাবে পছন্দের গরুর মাংস। এমন কাহিনি প্রচুর। কিন্তু নালিশ আর বন্ধ হয় না।
৯৭,৯৮ সালে এখনকারমত কেউ সরাসরি
” আই লাভ ইউ ” বলতো না।
সুন্দর ভাজ করা নীল লতাপাতা মার্কা কাগজে দুনিয়ার আগান-বাগান পত্রে লিখে প্রেম নিবেদন করতো।উফ্ কত যে কবিতা নকল করা লাগছে। আমার আর আমার সাথের দুজন আমাদের কাজ ছিলো পিয়নের। এর চিঠি ওকে আর ওর চিঠি একে। এমন ও হয়েছে বান্ধবী যার সাথে প্রেম করে তাকে নিজে হাতে চিঠি লিখে দিয়েছি। আবার সেই চিঠি সেই প্রেমিককে দিয়েও আসছি। সমস্যা টা সেখানে ছিলো না, সমস্যা দাঁড়ালো একদিন বাসায় এসে দেখি আমার পড়ার টেবিল যত্রতত্র অবস্থায়। মা কথা বলছে না। আব্বা মুখ ভার। আমি আর বুঝি না করলাম টা কি? দুপুরে হঠাৎ নিরামিষ জুটলো। বুজলাম কিছু তো হয়েছে। তখন তো আর মোবাইল নাই যে বান্ধবীদের কাউকে জিজ্ঞেস করবো কি হয়েছে… যাক বিকেলে চাচাতো বোনের কথায় বুজলাম ঘটনা গুরুতর। আমি আর কুহেলী যখন দিনার প্রেম পত্র নাঈমকে দিতে গিয়েছি পাড়ার মুরুব্বি একজন দেখেছে।
হায়রে এতো বুঝাই, ওরে আমার সাথে কিছুনা! / না কে শুনে কার কথা।
কুহেলীর বাসায়ও উত্তম মধ্যম আর আমার তো আছেই, পুরা ওলে ওলে ড্যান্স।
পরে অবশ্য আসলটা যখন জানাজানি হয়, মার কি আদর…. সে বেলায় রক্ষে হলো।
পরে পিয়নের বিষয়টি মা জেনে গেলো কড়া নিষেধ কাউকে কোন চিঠি লিখে দিতে পারবি না। সে যাত্রায় কথা দিয়ে রক্ষা পেলাম।

স্যারের অর্থনীতির ব্যাচ পড়ে বাড়ি ফেরার সময় দেখি আমাদের ক্লাসের ই তিন চার জন মিলে গলির এক চিপায় দাড়ায় কি জেনো করছে। আমরা তিনজন মেয়ে হলেও আমাদের চেহারা আহামরি ছিলোও না এবং আর্কষণ করার বিষয় টা ও ছিলো না। স্থুলকায় ছিলাম বিধায় এবং চরম বাঁদরামি করতাম যা ঐ সময়ের কোন মেয়েরা করতো না তাই কিছু ছেলের কাছে আমরা একটু অন্যরকম ছিলাম। ওরা ঐ মেয়ে দেখলে কেমন একটা চাহনি দিতো সেটা আমাদের দিকে দিতো না। দুঃখজনক হলেও দিতো না কি করার… আকর্ষণ এর বদলে বিকর্ষন হতো। যে কারনে প্রেম পত্র আসে নাই।

যাক, গলির মাথায় কি করে জানার জন্য অনুরাধা আগে আগে যেয়ে আর আসে না। আমি আর কুহেলী যেয়ে দেখি অনুরাধা সুন্দর করে মুনিমের কাছে থেকে সিগারেট টানছে। দর্শক হয়ে গেলাম আমি আর কুহেলী। এমন দেখতে দেখতে একদিন টানার আগেই খেলাম ধরা। পাড়ার বড় ভাই। হাত ধরে হিড়হিড় করতে করতে বাসায় পৌছায় দিলো কিন্তু নালিশ আর করলো না। শুধু যাবার সময় বললো, আমি জেনো তোকে আর কখনও এসব ছাইপাঁশ খেতে না দেখি। আরে জ্বালা আমি তো এর স্বাদটাই নিতে পারলাম না তার আগেই। এ কেমন অবিচার।
কিন্তু সমস্যা হলো বাসায় কিভাবে জানলো। মা তো সকাল থেকেই বলছে আব্বাকে, তোমার মেয়ের এতো অবনতি, আমি জানতাম এমনই হবে।
হায় আল্লাহ করলাম কি আবার? দুপুরে খাবার নাই। আব্বা কথা বলে না। কি বিপদ… সন্ধ্যায় চাচা ঘরে আসলেন, এই রে…. তুই এগুলো কি শুরু করছিস? আমি বলি আমি কি করলাম আমি তো নিজেই জানি না। উল্টো এক্যশন…
থাপড়ায় তোর দাঁত ফেলায় দিবো। এখনো মাথায় আসেনা এ কথাটা সবাই কেনো বলতো, থাপড়ায় তো দাঁত পড়ে না…. গালটা ব্যাথা হয়, লাল হয়।
———- এইটুকু বয়সে এইসব… আমি তখনও তাকায় আছি হা করে… করলাম টা কি….?এই কবে থেকে খাস এসব… আমিও জিজ্ঞেস করি কোন সব…
চাচায় আব্বা কে বলে ভাইজান, আপনার মেয়ে কাদের সাথে মিশে? মেয়ে তো পুরা উচ্ছন্নে গেছে। এই তুই বিড়ি খাওয়া কবে থেকে শুরু করলি? সাথে কি ঐ ছাঁইপাশ ও খাস? হায় হায় কি বলে আমি তো খাওয়ার চান্সই পাইলাম না। পরে অবশ্য আসলটা বললাম। বিশ্বাস করলো কি করলো না জানি না কিন্তু ও যাত্রায় বাচলাম।
মজার বিষয় ছিলো সমবয়সী পাড়াত, চাচাত ভাই মাঝে মাঝেই বলতো ঐ বিড়ি খাবি? চল যাই টান দেই…. আমিও এক গাল হেসেই বলতাম চল দাদা টান দেই…
কিছুটা ভালোই যাচ্ছিলো দিনকাল মানে কোন নালিশ আসছিলো না। ভালো… আমার জন্য বিশাল কিছু বকাঝকা হচ্ছে না আর কি চাই…

বেশিদিন আবার সুখ থাকে না কথায় আছে। একদিন আব্বার সাথে পাশের বাড়ির শাহীদ চাচার কথা বলতে দেখে বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো। বাড়ির পিছন দরজা দিয়ে সোজা শিবমন্দির পাড় হয়ে অনুরাধাদের বাড়ি। সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে চারিদিকে থমথমে পরিবেশ। আজ আবারও কপালে খারাপ আছে। বোন এসে বলে গেলো তোরে আজকে মেরেই ফেলবে দেখিস। ফুপু তাকায় ক’টা ক’টা চোখে। আবার আমিও ভীষণ অনুতাপের চেহারা বানানোর চেষ্টা করছি কিন্তু হচ্ছে না। কারনটাও তো জানি না, অনুতাপ হবো কেনো…?
রাত ১০ টা বাজে খাবার টেবিলে যাবার সময়। একদম সময় পালন না করলে আব্বা এবং মা দুজনেরই বকা খেতে হবে। কারন তারা দু’জন ই সময়ের এদিক ওদিক পছন্দ করতেন না। টেবিলে গেছি আব্বা বললেন সামনে এসে দাঁড়াও। বুজলাম ওলে ওলে ড্যান্স হওয়ার সম্ভবনা ১০০%…. আব্বা আমাকে হঠাৎ বিষ্মিত করে প্রশ্ন করলেন তুমি তো মেয়ে তাই না… ? আমি না, অনেক কষ্টে হাসি চাপিয়ে বললাম,
—– আব্বা তাই তো মনে হয়…
—– তো তোমার কি সালমান শাহ্ হওয়ার শখ হইছে ?
—- ও আল্লাহ, আব্বা কি বলে…? মাইর খাওয়ার কথা ভুলে * কেয়ামত থেকে কেয়ামতের সব সিন চোখের সামনে ভেসে উঠলো। এক ধমকে আবার বাস্তবে ফেরত।
—– তুই নাকি মিন্টু নাকে এক ছেলেকে মারছিস।
— আব্বা আমি তো মারতাম না ওকে। মিসটেক হয়ে গেছে আব্বা। মিন্টু ছেলেটাকে আমি চিনতাম না আব্বা। ও পাড়ায় নাকি নতুন। আমার সামনে এসে দাঁড়াইছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম এই তোমার নাম কি সবুজ? ও কোন কথা বলে না, তাকায় আছে। আমি তাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু কথা বলে না। আর আব্বা আমার তো চেহারা মনে থাকে না তুমি জানো। সবুজকে একদিন দেখছিলাম তাই মনেও করতে পারছিলাম না। আর আব্বা আমি তো সবুজকে মারতে গিয়ে মিন্টুকে ভুলে মারছি। আমার দোষ কোথায়….?
—- ও তাহলে যা শুনছি তাই ঠিক। তুমি আজকাল মারামারি করো…
— না আব্বা, আমরা ব্যাচ থেকে ফেরার পথে বাজে কথা বলছে সবুজ। বেশ কয়েকদিন ধরেই এমনটা করতেছে। ওর বাকি বন্ধুগুলাকে সানটিং ঠিকমত দেয়া হয়েছে, বাকি আছে শুধু ও। একটু শেষ করলাম বাকিটা ইতিহাস।
পরে অবশ্য মিন্টুর সেদিনের কথার উত্তর না দেবার কারনটা জানতে পেরেছিলাম। ও কথা বলতে পারতো না। ছোট থেকেই বোবা। খুব খারাপ লেগেছিল সেইদিন। পরে ও ছিলো আমার খুব ভালো বন্ধু। আর ও ছিলো আমার একদম মনের মত। কিভাবে জেনো সব কথা চোখের ইশারায় বুজতাম। পরে অবশ্য হারিয়ে ফেলেছি। ট্রান্সফার এর চাকরির সুবাদে ওরা চলে যায় রংপুর। ব্যস কিছু দিন চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ। পরে আর হয় নি।
****
নামটা এ মূহুর্তে মনে আসছে না। আহসান আহমেদ রোডে নতুন একটা রেস্টুরেন্ট। কোন একটা উপলক্ষে সবাই ওখানে। চাইনিজ খাবার তখন নতুনভাবে খুব নামকরা। পছন্দ ও অনেক। ওর্ডার দিতে হবে। আমি আমার স্বভাবতই হঠাৎ ভুলবশত আশেপাশের কথা চিন্তা না করেই অভ্যেস মত সুন্দর করে শিস বাজিয়ে ওয়েটার কে ডাকলাম। শিস বাজাতে পারতাম না কিন্তু চেষ্টারও ত্রুটি রাখতাম না। বাসায় আসলাম বাকিটা ইতিহাস হয়ে গেলো…..

®

নীলিকা নীলাচল***

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন