আমরা অনেক কিছুই শুনি, জানি, মনের মধ্যে ধারণ করি কিন্তু কতটা কার্যে পরিনিত করতে পারি। অন্তত আমি সবগুলিই কার্যে পরিনিত করতে পারিনি। খুবই অল্প কিছু কার্যে পরিনিত করতে পেরেছি এবং তা থেকে আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো ফল পেয়েছি। ছোট একটি উদাহরণ দেই।
দীর্ঘদিন আগে, সম্ভবত ১০/১২ বছর। আমি বাংলাদেশে যাচ্ছিলাম সস্তা কুয়েত এয়ারওয়েজে। লন্ডনে প্রায় ১৫-২০ ঘন্টা বিরতি ছিল। সেই সময় আবার আমার বন্ধু ডক্টর মজিব সম্ভবত লন্ডনে একটি কলেজে কিছুদিনের জন্য পড়াতেন। তার আমন্ত্রণে আমি এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে শহরে গেলাম তার আতিথিয়েতা গ্রহণ করতে।
খুব ভালো কয়েকটি ঘন্টা কেটেছিল। ওই সময় আমার বেশ স্ট্রাগগল চলছিল। নতুন চাকরি, বৌয়ের ভিসা হ্যাঙ্গিং অবস্থায়, স্টুডেন্ট লোন ঝুলন্ত ইত্যাদি। কোনো মোতে যেন আগানো যাচ্ছিলোনা। ডক্টর মজিব আমাকে স্থানীয় একটি রেস্তোরায় নিয়ে গেলেন, এবং মেনু দেখে যা ইচ্ছা তাই অর্ডার করতে বললেন। আমি বললাম কোর্মা-পোলাও বাদ দিয়ে আমাকে মাছ আর কিছু সবজি খাওয়াতে পারেন। আমার মনে আছে দুজনে মিলে বিশাল একটি মাছ খেয়েছিলাম।
যাহোক খাওয়া শেষে আমরা একটি বইয়ের দোকানে গেলাম। ডক্টর মজিব আমাকে একটি বই উপহার দিলেন। বইটি ছিলো জার্মান দার্শনিক ফেড্রিক নিৎসের। বইটি যাত্রাপথে এবং কানাডা এসে পড়লাম। বেশ সময় লাগলো, কারণ একেতো philoshopical বই, তারপর আবার জার্মান থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ তাই আমার অনেক সময় লেগেছে। নামটা ঠিক এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তবে বইয়ের কয়টি লাইন এখনো মনে আছে। এবং ওই লাইনগুলি বিগত ১০ বছর ধরে পদে পদে উপলদ্ধি করেছি। কথাগুলি ঠিক এরকম,
“To reach anything that is worthwhile, to reach anything that is valuable you have to go through an extra ordinary amount of effort.”
…….any existence that is too comfortable is worthless.
Friedrich Nietzsche’s (1844-1900)

আসলে, অন্তত আমার প্রতিটি কাজেই extra ordinary amount of effort দিতে হয়েছে। অনেক ধন্যবাদ ডক্টর মজিব। সেই মাছ ,১০/১২ বছর আগেই হজম হয়ে কোথায় চলে গেছে, কিন্তু ওই বইটির ওই লাইনগুলি আজীবন রয়ে যাবে আমার মনে। আমার বাপ-মা যে প্রচুর সম্পত্তি রেখে যেতে পারেনি, আমাদেরকে যে সব সময় দুধে ভাতে রাখতে পারেনি, আমি তার জন্য বিন্দু মাত্র আফসোছ করি না, বরং আমি মনে করি তারা যে আদর্শটুকু দিয়ে গেছেন সেটিই বিলিয়ন ডলারের থেকে মূল্যবান, অন্তত আমার কাছে।
সেই পুরাতন কথা,
“ কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে? ”
—কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন