এ মুহূর্তে নিঃসন্দেহে ‘পৃথিবী’ নামক গ্রহে প্রাণী জগতে আমি সর্বাপেক্ষা ঘৃণিত এক প্রাণী । সারা দুনিয়ায় কাতারে কাতারে মানুষ এর মৃত্যুর পিছনে আমাকেই দায়ী করা হচ্ছে। মানব হত্যাই যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে তবে একই অপরাধে আপনাদের মাঝে সভ্যতার মুখোশ পড়া অসংখ্য ভদ্রলোকের আমার কাতারে ফেলে একই দড়িতে ফাঁসি দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। কিন্তু, আপনারা তা দেবেন না, কারণ দাউদ হায়দারের মতো বলতে হয়, জন্মই আমার আজন্ম পাপ।

আমি করোনা ভাইরাস, অতি তুচ্ছ অণুজীব হয়েও জানি, পুঁজিবাদী সমাজ ব্যাবস্থায়, দুটি শ্রেণী থাকে: ধনী শাসক গোষ্ঠী ও গরিব শোষিত শ্রেণী । আর এই শাসক গোষ্ঠী যখন তাদের শোষণ প্রক্রিয়ায় ব্যাহত হয় এমন কোনো উপাদান পায়ে থাকে তখন তাদেরকে শায়েস্তা কোরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। আর তাই, একেকটি স্বঘোষিত পরাশক্তি আরেকটি জাতিকে বা গোষ্ঠীকে নিঃশেষ করার জন্য বিভিন্ন মারনাস্ত্র ব্যাবহার করে যার মধ্যে একটি হচ্ছে জীবাণু মারনাস্ত্র। এমনতো হতে পারে, চীন , ইরানকে সায়েস্থা করতে এরকম একটি জীবাণু মারণাস্ত্র তৈরিতে আমাকে জন্ম দেওয়া হয়েছিল! তবে কিছুটা বুমেরাং হয়ে ওদের ঘাড়েই এসে পড়েছে। এমনটি যে হয়েছেই তা বলছি না , তবে হতেও তো পারে!!

আমি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি যখন দেখি, আমাকে ঘিরে আস্তিক -নাস্তিকেরা একে ওপরের দিকে কাদা ছোড়াছুড়ি করছে। ওহে অন্ধের দল তোরা কি দেখিস না ধর্ম ও বিজ্ঞানকে আমি কাছা কাছি এনে পরস্পরের দিকে চমৎকার ভাবে লেলিয়ে দিয়েছি । আমাকে নির্বংশ করতে একদল অতি ধর্ম ভীরু মানুষ সারাক্ষন তসবিহ তেলোয়াত করছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন দোয়া দরূদ পোষ্ট করে তা আবার শেয়ার করা জন্য অনুরোধ করছে, মোল্লা/মুসুল্লিরা সোশ্যাল আইসোলেশন বা সোশ্যাল ডিসটেন্ট না মেনে গণ জামায়েত করে সৃষ্টিকর্তার কাছে ফরিয়াদ করে আমার মৃত্যু কামনা করছে । আবার, আরেকদল তথাকথিত বিদ্বান নাস্তিক ব্যাক্তিরা ধর্ম কর্মের মুখে ছাই লেপন করে মহান সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি বৈজ্ঞানিকদের দিকে তীর্থের কাকের মতো চেয়ে আছে কখন এই বৈজ্ঞানিকরা আমাকে মেরে ফেলার ভ্যাকসিন তৈরী করবে , আর তার পর এই নাস্তিকের দল “ইউরেকা ইউরেকা” বলে চিৎকার করে বলবে , ” এই দেখ মানুষের কত ক্ষমতা “!!!

মুরুব্বিদের কাছে শুনেছি, হাতি কাদায় পড়লে চামচিকাও লাথি মারে। বাংলাদেশে সম্প্রতি প্রবাসীদের অবস্থা হয়েছে তাই। দেশে ফেরা বেচারা প্রবাসীদের অবস্থা দেখে আমারিই বেশ কোরুনা হচ্ছে । এমুহুর্তে যতদূর জানি , কানাডা, এমেরিকা , অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশ তাদের নিজ নিজ নাগরিকদের দেশে ফিড়ে আনার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে, তখন ইতালি, মধ্যপ্রাচ্চ প্রভৃতি দেশ থেকে দেশে ফেরা কিছু বাংলাদেশিরা কোয়ারেন্টাইনের নামে বেশ কিছু জটিলতায় পড়েছেন । যে বাংলাদেশকে এনারা রেমিটেন্সের মাধমে এতকিছু দিলেন সেই জন্মভূমির কাছে এদের মন্ত্রীর দেয়া নতুন নাম ‘নবাবজাদা’ পেয়ে এদের মনের কষ্টের কথা ভেবে আমরাই খারাপ লাগছে। তৈলবাজদের নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটা, আতশবাজি করা, বাচ্চাদের স্কুল বন্ধের নামে আই ওয়াশ, অর্থ লোভী স্যানিটাইজার, মাস্ক ব্যাবসায়ীদের নিয়ণ্ত্রণে না রেখে এই প্রবাসীদের ঘাড়ে সব দোষ চাপানো দেখে আমি কেবল আড়ালে মুচ কি হাসি । যত দোষ সব নন্দ ঘোষ!!

আমি করোনা ভাইরাস বলছি, আমাকে যদি তোরা সত্যিকার ভাবে নির্বংস করতে চাস তাহলে চুপি চুপি টিপস দিচ্ছি: ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাতধুবি, বাসায় অতিথি সেবা না করে প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে না যেয়ে বাসার মধ্যে থেকে পরিবারকে সময় দিবি। মাত্র কয়টা দিন কষ্ট কর, আমি এমনিই পোষক না পেয়ে মরে যাবো অথবা ভিন গ্রহে চলে যাবো। সবচেয়ে যেটা জরুরি  সেটা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে গণ সচেতনতা তৈরী করা। আবারো বলছি প্রবাসী/ স্বদেশী, নারী/পুরুষ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে গণ সচেতনতা তৈরী কর, তাহলেই আমি নিঃশেষ হবো।

হে মূর্খ মানব গোষ্ঠী, জন্মেছিস যখন একদিন অবশই এক দিন না একদিন মারা যাবিই। এতোই যদি বেঁচে থাকার শখ হয়, এতোই যদি কবরের আজাবের ভয় হয়, এবার অন্তত সুযোগ এসেছে নিজেকে বদলানোর, নিজের চরিত্রকে বদলানোর, নিজের খাছলতকে বদলানোর। নিজেকে বদলানো মানে এই না যে নিজের ধর্ম , বর্ণ , গোত্র, রাজনীতি ইত্যাদির সাথে অমিল ব্যাক্তিদের আগুনে পুড়ে বা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে। নিজে কে বদলে ফেলা মানে এই না সারাক্ষন লোক দেখানোভাবে মসজিদে , মন্দিরে , গির্জায় পরে থাকতে হবে। অথবা, হাজার হাজার টাকা খরচ করে পবিত্র কাবা শরীফে যেয়ে ফিড়ে এসে মানুষের নামে গীবত গেয়ে, অন্যের হক মেরে খেয়ে, সকারকে কর ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন অন্যায় কাজে লিপ্ত থেকে ধর্ম কর্ম করতে হবে । নিজেকে বদলে ফেলা মানে হচ্ছে নিজের মনের মধ্যে আমূল পরবর্তন নিয়ে আসা, সৃষ্টিকর্তার সকল সৃষ্টিকে ভালোবাসা।

ওহে গর্দভের দল, ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের কোনো বিরোধ নেই। ধর্ম হচ্ছে নিজ নিজ বিশ্বাসঃ। তবে , খেয়াল রাখিস, তোদের এই বিশ্বাসঃ যেন কুশিক্ষা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়। তোদের এই বিশ্বাসঃ যেন শোষণের হাতিয়ার হিসাবে ব্যাবহারিত না হয়, তোদের এই বিশ্বাসঃ যেন কোনো গোষ্ঠীকে অসম্মান করার কাজে না ব্যাবহারিত হয়। আমি, করোনা ভাইরাস, মৃত্যু ভয়,তোদের একে অপরের কাছে এনে দিয়েছি। । আমাকে তোদের ধন্যবাদ দেয়া উচিত, আমি তোদের শেষবারের মতো সুযোগ করে দিয়ে গেলাম ” এবার তোরা মানুষ হ ” !!!

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্ধুদের কাছে একটি মানবিক আবেদন..
পরবর্তী নিবন্ধকোন এক সাইকোপ্যাথিক ***
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন