হাতে অফুরন্ত সময় ! ঘরে বসে আছি আর টেলিভশন দেখছি !! সেইসাথে ফেইসবুক চর্চাও চলছে। করোনা ভাইরাস সবাইকে যেন গৃহবন্দী করে ফেলেছে। কানাডায় আসার পর এতো দীর্ঘ সময় আর ঘরে বসে থাকিনি। ফেসবুকে করোনা ভাইরাস নিয়ে কত যে আলোচলা-সমালোচলা তার কোন ইয়াত্তা নাই। অনেক সময় বিরক্ত হচ্ছি ,আবার অনেক সময় কিছু কিছু নুতন তথ্য বা  ইতিহাস জেনে নিজের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করছি। 

আজ ফেসবুকে থেকে এক বন্ধুর পোস্ট থেকে একটি বিষয় জানতে পারলাম। আমার বন্ধু জার্মানিতে বসবাস করছে দীর্ঘদিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করার পর তার সাথে আমার আর দেখা হয়নি।  তবে আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে আবার পুনরায় যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। সে তার পোস্টে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় জার্মানিতে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সেই সম্পর্কে। 

তার লেখার কিছু অংশ নিম্নে উল্লেখ করছি :

 সন্ধ্যায় টেলিভিশনে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের খবর দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ি এবং সকালে আবার অনেক আশা নিয়ে পত্রিকার পাতা উলটাই কিন্তু আশার কোনো আলো দেখিনা। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা দিনের পরদিন বেড়েই চলেছে। 

প্রতিষেধক যেগুলো ইতিমধ্যে আবিষ্কারের পথে, সেগুলো বাজারে আসবে আগামী বছর। জার্মানির বিজ্ঞানীরা এখন দিনরাত পরিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে ম্যলেরিয়া, কলেরা, যক্ষ্মা এবং এবলার প্রতিষেধক গুলো নিয়ে। এই প্রতিষেধক গুলো করোনায় আক্রান্তদের উপর প্রয়োগ করে কতটুকু ফলাফল পাওয়া যাবে এটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। এটার ফলাফল আসতেও সময় লাগবে কয়েক সপ্তাহ। ঔষধ আবিষ্কারের শ্রেষ্ঠতম পরিক্ষাগার গুলোর অবস্থান জার্মানিতে, শুধু তাই নয় স্বাস্থ্যসেবার মানও তেমনি ভাবে উন্নত এবং শক্তিশালী।
করোনায় আক্রান্ত রুগীকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রয়োজন ICU, সেটা এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকার পরও আরও বাড়ানো হচ্ছে। 

বর্তমানে প্রতিদিন ৩৫০০০০ মানুষকে টেস্ট করা হচ্ছে এবং খুব তাড়াতাড়ি টেস্টের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে। প্রতিটা মানুষকে টেস্ট করে যাদের মধ্যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা আছে তারাই একমাত্র মুক্তভাবে চলাচলের অনুমতি পাবে আর অন্যরা থাকবে বাসায়। 

তাছাড়া অন্য একটি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে এই যে, যদি কেউ তার অজান্তে করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত মানুষের সংস্পর্শে আসে, তখন তার মুঠোফোনে সরাসরি এই খবর চলে আসবে, যেন সে দ্রুত নিজেকে টেস্ট করায় …..…………….”

তার সম্পূর্ণ লেখাটি বেশ বড় ,তাই আমি শুধু কিছু অংশ কপি করেছি।

চীন দেশ থেকে উদ্ভুত করোনা ভাইরাস বা  কোবিড -১৯ সারা বিশ্বকে এখন গ্রাস করে ফেলেছে। অনেকগুলি জীবনহানির পর চীন দেশ করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে বলে তারা দাবি করছে। ইতোমধ্যে ইউরোপ উত্তর আমেরিকায় করোনা তার প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে।  করোনার প্রভাব ও ভয়াবহতা সারা দুনিয়ার মানুষ আজ দিশেহারা । ডিসেম্বরের দিকে এ ভাইরাস এর কথা জানলেও ততটা গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করিনি। আর তারপর থেকেই আস্তে আস্তে করোনার বিস্তার ও ভয়াবহতা নিয়ে বিশ্ববাসীর বর্তমান অবস্থা অবলোকন করছি। সকল সতর্কতা অবলম্বন সত্ত্বেও জানিনা আমি নিজেও এ মহামারী থেকে রক্ষা পাবো কিনা।

আমার জার্মান প্রবাসী বন্ধুর লেখাটি উদৃত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় জার্মান সরকার কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে সে সম্পর্কে পাঠকদের কিঞ্চিৎ ধারণা দেয়া।একই সাথে আমাদের কানাডা ,আমেরিকা বা বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কারের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা।  জার্মানি বিশ্বের একটি উন্নত জাতি। জ্ঞান বিজ্ঞানের সব শাখায় তাদের অবাধ বিচরণ। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের এ সময় উপযোগী পদক্ষেপ যথারীতি প্রশংসনীয়। অপরদিকে আমরা জানি উত্তর আমেরিকা বা ইউরোপের অন্য সব দেশ ও জ্ঞান বিজ্ঞান বা নুতন নতুন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে না। এ সব দেশেও স্বাস্থ্য সেবা খাত অনেক উন্নত।  কিন্তু করোনা ভাইরাস এর কারণে উদ্ভুত কোবিড -১৯ এর ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কারে এতো শ্লথ গতি কেনো ?

কানাডা -আমেরিকা থেকে সহসাই এ মহামারীর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কারের কোনো খবর পাবো কিনা সে বিষয়ে আমি রীতিমত সন্দিহান ! বেশ কিছুদিন আগে শুনেছিলাম আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার দৈনন্দিন ব্রিফিংয়ে ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। সাস্কাচুয়ানে বা আলবার্টায় প্রতিষেধক আবিষ্কারের অনেক অগ্রগতির কথাও জেনেছিলাম। এছাড়া আমেরিকার সিয়াটলেও  ভ্যাকসিন আবিষ্কারের অগ্রগতির কথা শুনেছিলাম। কেউ কেউ বলেছেন এই ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক বাজারজাত করতে নাকি এক থেকে দেড় বছর লাগবে। খবরটি জেনে আনন্দের থেকে আমার হতাশাই বেশি হয়েছিল। কারণ এ দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে গেলে আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের কি অবস্থা হবে ? গত সপ্তাহে কানাডার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কোথায় জানতে পারলাম যে এ ভাইরাস এর প্রভাব দীর্ঘায়িত হতে পারে। 

প্রতিদিন সকালে উঠে টেলিভশন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখছি শুধু মৃত্যু আর মৃত্যু। ভাইরাস তার বিস্তৃতি অব্যাহত রেখেছে পূর্ণ উদ্দামে। আমি জানি, মহামারী থেকে পরিত্রান পেতে একটি সুখবরের জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সেলফ আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইন যাই বলি না কেন এতে গৃহবন্ধী থেকে মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠছেন। কখন একটি ভালো খবর শুনবো যে করোনা ভাইরাস এর ভ্যাকসিন তৈরী হয়েছে , মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে  আর পৃথিবীর মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই মহামারী থেকে রেহাই দিন অতঃপর সব সামাজিক আচার অনুষ্ঠান   পালন স্বাভাবিক জীবন যাপনের তৌফিক দিন এই কামনা করছি ।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন