আমাদের এখানে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে এখানকার ফেডারেল, প্রভিন্সিয়াল এবং স্থানীয় সরকার তাদের আওতার বা সাধ্যের মধ্যে থাকা যা যা করার তা করছেন, এবং প্রয়োজনে আরো করবেন বলে আশা দিয়ে চলেছেন। যাহোক, আমার এই লেখার মূল উদ্দেশ্য আমাদের ফেডারেল সরকার, অর্থাৎ ট্র্রুডো সরকার এর কানাডার জনগণের জন্য সাম্প্রতিক ঘোষণাকৃত অর্থনৈতিক সাহায্যের বিষয়। সে যতটুকু করার করছেন, যদিও কিছু কিছু লোক সবসময়েই থাকবে যাদের বস্তা ভর্তি দিলেও কাজ হবে না, সে যেই সরকারই হোক না কেন। সে কথায় আমি যাচ্ছি না।

প্রথমে আমাদের বাংলাদেশের কিছু ভাইবোনকে বলছি, কানাডার মানুষের জীবনে যাত্রা, এখানে তাদের বাস্তব অবস্থা এখানকার জীবনধারা সমন্ধে ভালো করে না জেনে আজেবাজে বা ভ্রান্তিমূলক তথ্য অন্তত কানাডা বা কানাডা সরকার সমন্ধে বলবেন না, তাতে করে দেশের সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। আপনি যদি এখানকার সরকারের বক্তব্য বা পরিকল্পনাকে বাংলায় ট্রান্সলেট করতে চান তাহলে সঠিকভাবে করুন, মন গড়া কিছু লিখবেন না। আর এইরকম কাজ কানাডাবাসী কেউ করে থাকলে বিরত থাকাই ভালো। আপনারা কি বলবেন সেটি বন্ধ করার আমার কোনো অধিকার নেই তবে অনুরোধ করতে পারি।

এবার আসি শিরোনামের কথায়। আমি কেন বলেছি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্র্রুডোর পকেট ভর্তি টাকাও নেই, আবার গোলাভর্তি ধানও নেই ! হাঁ, আসলেই ট্র্রুডোর পকেট ভর্তি টাকা বা গোলাভর্তি ধান নেই !! তিনিও আমাদের মতো একজন ট্যাক্স প্রদানকারী এদেশের বেক্তি, তিনিও তার বেতন থেকে নিয়মমতো ট্যাক্স দিয়ে থাকেন। তাহলে কোথা থেকে টাকা আসছে। অবশ্যই সরকারি তহবিল থেকে।
কিভাবে ?
হাঁ, আসছে এদেশের ট্যাক্স পেয়ারদের থেকে, এবং সেটি হচ্ছে এদেশের একটি জবাবদিহিমূলক প্রশাসন এবং একটি সুগঠিত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এর কারণে। এখানকার প্রতি স্তরের মানুষ ট্যাক্স দেয়, দেশের প্রাকৃতিক সস্পদের সুব্যবহার এবং সার্ভিস সেক্টরসহ অন্যান্য আরো কিছু ক্ষেত্র থেকে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা হয়। আপনাদের সকলের সাথে আমিও প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্র্রুডোর বর্তমান ক্রান্তিকালের পদক্ষেপগুলিকে খুবই সাধুবাদ জানাই, তবে মনে রাখতে হবে এই সাধুবাদ শুধু তার একার নয়। এই প্রশংসার দাবিদার এদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া ট্যাক্স পেয়ারদের থেকে শুরু করে ছোট-বড়ো সমস্ত ব্যাবসায়ী, চাকরিজীবী এবং সর্বোপরি এদেশের রাজনৈতিক পদ্ধতি, প্রশাসন এবং নিরপেক্ষভাবে নির্বাচিত সরকারের।

এই জবাবদিহিমূলক প্রশাসনের গদিতে ট্র্রুডোর জায়গায় অন্য কোনো প্রধানমন্ত্রী থাকলেও তিনি কমবেশি ট্র্রুডো যা করছেন তাই করতেন। আমরা এদেশের ইতিহাস ঘাটলে তা দেখতে পাই। এই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দাবিদার শুধুমাত্র লিবারেল পার্টি নয়, সবারই অবদান আছে, এদের কেউ কেউ রাজগদিতে এসেছেন আবার কেউ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাজগদিতে আসেন নাই, কিন্তু দেশের জন্য দৃষ্টান্তমূলক কাজ করে গেছেন। ২০০৮ সালে রিসিশনের সময় এখানকার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন স্টিফেন হার্পার, তিনি এবং তার তৎকালীন অর্থমন্ত্রী যথেষ্ট দক্ষতার সাথে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। আবার এদেশের সার্বজনীন ফ্রি চিকিৎসার জনক ছিলেন এনডিপির নেতা টমি ডগলাস। নাফটা করে গেছেন কংসেরভেটিভ এর মালরুনি। আবার লিবারেলের পিয়ারে ট্র্রুডো করে গেছেন আমাদের জনগণের অধিকারের গুরুত্বপূর্ণ দলিল Charter of Rights and Freedoms. অর্থাৎ একটি দেশের প্রশাসন এবং গোটা সিস্টেম যদি নিরপেক্ষ এবং জবাবদিহিমূলক হয় তাহলে সেই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা রাষ্ট্রের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করা যায়।

এখানকার বিরোধীদলকে আমি কখনো মার খাওয়া, ক্ষমতাহীন বা সরকারি বিভিন্ন ইস্যুতে প্রভাবহীন দেখি নাই, কারণ হয়তো এখানকার সরকার বিরোধীদলকে দমানোর পরিবর্তে রস্ত্রপরিচালনায় ব্যাস্ত থাকেন বেশি। সেই কবে কখন জার্মানের কোনো এক কোম্পানির সাথে অস্ত্র কেনার ব্যাপারে সম্ভবত মাত্র ২ লাখ ডলারের কেসে ফেঁসে গিয়ে প্রাক্তন কনসারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী মালরুনিকে ক্ষমতা চলে যাওয়ার পরেও খেসারত দিতে হয়েছে, লিবারেল প্রধানমন্ত্রী পল মার্টিনকে তো স্পনসরশিপ স্কেন্ডেলের কারণে পদত্যাগই করতে হয়েছে, অথচ তিনি ছিলেন ক্রেচেন সরকারের তুখোড় অর্থমন্ত্রী, সম্প্রতি মিঃ ট্র্রুডোও এস.এন.সি লাভালোন কেসে ফেঁসে যান, এবং উনি উনার মেজরিটি হারিয়ে মাইনোরিটি সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, একটি দেশে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি এবং জবাবদিহিমূলক সরকার থাকলে যার যা ইচ্ছা তা করতে পারে না, এবং জনগণ দুঃসময়ে কিছুটা হলেও উপকৃত হয়।

এখন আসেন আমরা যারা ট্র্রুডোকে ভূয়সী প্রশংসা করছি তারা যেন ভুলে না যাই এদেশের খেটে খাওয়া ট্যাক্সপেয়ারদের এবং তাদেরই গড়ে তোলা প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি এবং সুশাসনকে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সাধুবাদ জানাই এদেশের সেই সমস্ত নেতাদের যারা এই প্রতিষ্ঠান এবং সুশানকে যুগে যুগে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছেন। আজকে ব্যাবসায়ী বা বড়ো বড়ো চাকরিজীবী ছাড়াও যারা Tim Horton এর মতো চায়ের দোকান, রিটেল স্টোরের সেলস পার্সন, রেস্টুরেন্টের ডিশওয়াসার, অফিসের কেরানি ইত্যাদি সবারই অবদানের কারণে এদেশের সরকারের কাছ থেকে এই বিপদের মুহূর্তে কিছুটা হলেও ভরসা পাচ্ছি।

বাংলাদেশের মতো দেশের সাথে কানাডার তুলনা করা ঠিক না, কিন্তু যারা বাংলাদেশ থেকে ট্র্রুডোকে প্রশংসার পানিতে ডুবিয়ে হাবুডুবু খাওয়াচ্ছেন তারা আগে চেষ্টা করুন দেশ থেকে চাটুকর, ক্ষমতালোভী, একঘেয়ে, বেহায়া রাজনীতিকদের বিতাড়িত করে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি এবং সুশান তৈরী করতে। শুধুমাত্র অবকাঠামোর উন্নয়নে কাজ হবে না, তার প্রমান দেশের লোক যখন বিপদে পড়ে তখন ভালো করে দেখা যায়। তা না হলে ওই প্রশাসনে যাকেই বসাবেন তার অবস্থা একই রকম হবে। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা অসংখ প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, কারণ তারা এখানে শত ব্যাস্ততা এবং স্ট্রাগলএর পরেও দেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট অবদান রাখছেন, যদিও জানিনা তার কতখানি সৎ ব্যাবহার হচ্ছে বা সাধারণ মানুষের কাজে আসছে।

পৃথিবীর এই ক্রান্তিকালে যার যা করণীয়, সবাই যদি তাই করি এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া চাই তাহলে অবশ্যই এই কালোমেঘের অবসান হবে। ১৯১৮ সনের স্প্যানিশ ফুলুতে ৫০ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিলো কিন্তু পৃথিবী এখনো চলছে এবং সূর্য প্রতিদিন ঠিকই উঠছে, এবং একটি শঙ্কামুক্ত সূর্য আবারো সুন্দর সকাল নিয়ে আসবে ইন্শাল্লাহ !

সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
মুকুল
টরন্টো

2 মন্তব্য

  1. অতি বাস্তব কথা। আমরা অনেকেই যে কোন কিছু কে অতি আবেগে বিচার করে অতিরঞ্জিত করে ফেলি।
    কানাডা সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে আসল যা তা হল সততা।
    আমরা প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্রেনট লোকদের বাদ দিলে বাকি সবাই তুলনা মুলক অন্য যে কোন দেশের লোকদের চেয়ে সৎ এবং কম সারতন্যেসি এটাই হল কানাডার আসল শক্তি।
    বাংলাদেশ ও যদি সৎ লোক প্রতিষ্ঠিত করা যায় সব হবে। যদিও এখনও. শুরু ই হয়নি আলেম জালেম রাজনীতিক আইনজীবী বিচারক সবাই মিথ্যা বলে। সৎ লোক গুল চোখের আরালে ইচ্ছা থাকলেও কিছু করতে পারেনা।
    কে বলে ডিজিটাল বাংলাদেশ লোকজন আইন মানেনা এবার করোনার কারনে দলিয় প্রভাব না থাকায় সব কেমন ঘরে
    কা প্রমান হল প্রশাসন ইচ্ছা করলে সব পারে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন