কচু পাতা আকারে ভালবাসার প্রকাণ্ড একটি হৃদয় চিহ্ন হয়েও, কচু পাতার মত ভাষার এত বিসরণ ব্যবহার অন্য কোনো সবজিতে নেই। কচু হবে, কচু খাও, কচু করবা, কচু গাছে গিয়ে ফাঁসি দাও, কচু গাছ কাটতে কাটতে খুনি, মানুষের জীবন ও মন কচু পাতার পানির মতন, আবার কখনও কখনও সরাসরি শুয়োর বলে গালি না দিয়ে “কচুখোর” বলা হয় ইত্যাদি । কিন্তু ভাষার এই সব বিসরণ ব্যবহার কচু পাতা তার গায়ে লাগায়ই না। এতে 1-octacosanol নামক মোম জাতীয় পদার্থ থাকায় পানিকে পর্যন্ত পাতায়, গায়ে লাগতে দেয়না।

অথচ ঘনশ্যামা বর্ণের এই পাতার রূপ লাবন্যর স্বতন্ত্রতার সাথে সাথে গুনের এতো সমাহার অন্য কোনো সবজিতে পাওয়া যায়না। অনুমান করা হয়, কচুর উৎপত্তি ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। কচু Araceae গোত্রভূক্ত একধরনের কন্দ জাতীয় ফসল।ইংরেজি নাম Taro ও বৈজ্ঞানিক নাম Colocasia esculenta । মাত্র ২০০০ বছর আগে এটি খাদ্য হিসাবে ব্যবহার শুরু হয়।

কচু পাতায় Histidine নামক অ্যামিনো এসিডের উপস্থিতি ভারী ধাতু অপসারণ করে বলে রেডিয়েশন যুক্ত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। tyrosine থাকায় নিকোটিন নেশাগ্রস্থ লোকের সুস্থতা আনতে সহায়তা করে। এর dopamine মস্তিষ্কের সুস্থতা আনে ও স্মৃতি শক্তি ধরে রাখে।এতে leucine থাকায় হাড়ের ব্যাথা কমায়। এর isoleucine পেশী শক্তি বাড়ায়। এর threonine বার্ধক্য জনিত চামড়া কুঁচকানো বিলম্বিত করে। সবজিতে সাধারণত Omega 3 পাওয়া যায় না , তবে কচু পাতায় এই Omega 3 বিদ্যমান। এটি আমাশয় রোগে বিশেষ উপকারী। বাত বা Arthritis রোগের জন্য এটা খুবই উপকারী। লম্বা চুলের ভঙ্গুরতা বন্ধেও কচুর উপকারিতা অনেক। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, তাই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়’।বাড়তি উপকার যেটা পাচ্ছেন তা হলো এন্টি সুপরিণতি এফেক্টস, ক্লান্তি হ্রাস, ওজন লাভ হ্রাস , শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম, ক্ষুদ্রতর কার্ডিয়াক রোগ, কম রক্তচাপ ইত্তাদি।

“এত গুন্ ধরি কি হবে বলো দুরবস্থার মাঝে , পোড়ো বাড়িটাতে লুকানো যে ধন তারে লাগে কোন কাজে” আমার এক বন্ধুর কৌতুহলের জবাবে এই পোস্টটা। তার প্রশ্ন ছিল এত গুন্ দিয়ে কি হবে, যদি কাজেই না লাগে ? টরন্টোতে কচু গাছ লাগানো যাবে কি না আর এর পাতা খাওয়া যাবে কিনা বল। খুব লাগানো যাবে। লাগানো সহজ আর হয়ও খুবই ভালো। রান্না করা কচুর পাতা খেতে খুবই সুস্বাদু । কচু পাতায় ক্যালসিয়াম oxalate নামক পদার্থের উপস্থিতির কারণে গলা চুলকায়। টরন্টোতে চাষ করা কচু পাতা রান্নার পরে ক্যালসিয়াম oxalate এর কার্যকারিতা তেমন থাকেনা। কচুগাছের মূল ও পাতা ছাড়াও এর ডাল, কান্ড, ফুল, লতি – সবই খাওয়া হয়। ইলিশ ও চিংড়ি মাছ দিয়ে কচু পাতার তরকারি বাংলাদেশীদের খুবই প্রিয়। এছাড়াও ভর্তা ও ভাজি করেও কচুগাছের বিভিন্ন অংশ খাওয়া হয়। তবে কচুপাতা ভর্তা ও ডাল বেশি জনপ্রিয়।

টরন্টোতে আপনার বাগানে কচু লাগাতে চাইলে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখনই সময়। এখানে বাংলাদেশী মুখীর গাছে ক্যালসিয়াম oxalate বেশী হয় , তাই চারা করার জন্য চাইনিজ দোকান থেকে মুখী কিনে পটে লাগাতে হবে। মুখীটি পটে আধা ইঞ্চি মাটির নিচে যেন থাকে। হালকা পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে রাখবেন। পানি বেশি হলে মুখী পচে যাবে। রৌদ্রালোকিত দক্ষিণের জানালায় পটটি রাখলে চারা স্বাস্থবান হবে। চারা যত বড়ই হোক, মে মাসের ২১ তারিখের পূর্বে না লাগানো ভালো। জমি যখন তৈরী , লাইনের দূরত্ব ১২ ইঞ্চি আর চারা থেকে চারার দূরত্ব ১০ ইঞ্চি করে, বিকালের দিকে চারা লাগিয়ে গোড়ায় পানি দিয়ে দিন। বেশি দূরত্বে লাগালে পাতার গোড়া শক্ত হয়ে যায়। এভাবে চারা করে লাগানো কচু পাতা ১ মাসের মধ্যে খাবার উপযুক্ত হবে। মধ্যের দুটো পাতা রেখে বাহিরের পাতা সতর্কতার সহিত কেটে নিন যাতে ভিতরের পাতার গায়ে আঘাত না লাগে। এভাবে প্রতি ১০ দিন পর পর পাতা কাটা যায়। সম্ভব হলে দিনে দুবার পানি দিতে হবে। রোদ যত বেশি পাবে ক্যালসিয়াম oxalate তত কম হবে। বাড়তি কোনো সারের প্রয়োজন হয় না। এখানে কচু গাছে রোগ-বালাই , পোকা-মাকড় তেমন হয় না। মৌসুম শেষে সব পাতা কেটে নিয়ে মাটির নিচ থেকে মুখী তুলে খেতে পারবেন। এই তাজা মুখী বাজারের মুখীর চেয়ে অনেক বেশি স্বাদের হয়।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন