প্রথমে আমার গভীর শোক এবং সমবেদনা গতকাল ঘটে যাওয়া নিউজল্যান্ডের মসজিদের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার সবার জন্য। অন্তত একজন হত্যাকারী ধরা পড়েছে এবং যতদূর জানা জাস্ছে তার এবং তাদের খুব সুক্ষ পরিকল্পনা ছিল। যাহোক তদন্ত, বিচার এবং শাস্তি হয়তো পর্যায়ক্রমে হবে, তবে সমস্ত প্রশাসন, মিডিয়া এবং নেতা নেত্রীসহ সবার প্রতি আমার বিশেষ আবেদন এই যে, আমরা যেন ঘটনার মুলে না গিয়ে এবং ভবিৎষতের prevention এর যথাযত বেবস্থা না নিয়ে বা না নেওয়ার আগে তড়িঘড়ি করে এই হত্যাকারীকে একজন মানসিক ভারসাম্য লোক বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা না করি।
আমার এক যুগের বেশি মানসিক রোগীদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং পরিসংখান থেকে বলতে পারি যে হত্যাকান্ড বা অন্নান্ন ক্রাইম মানসিক ভাবে challenged মানুষের থেকে আমাদের মতো স্বাভাবিক মানুষেরাই বেশি করে থাকে। বরং এই মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জড লোকগুলি তাদের অসুস্থতার বাইরে আমাদের অনেকের থেকে অনেক ভালো মনের মানুষ। সুযোগ পেলে তাদেরকে আন্তরিকভাবে কাছে টেনে দেখুন, দেখবেন তারা কত সুন্দর, কিন্তু সাম্প্রতিক প্রশাসন, সমাজ বা বিচার বিভাগ যেন কোনো মোতে কারো ওপর চাপিয়ে দিয়ে দায় সারতে পারলেই বাঁচে, এতে করে কাজের কাজ খুব একটা হয়না বরং কালিমা লেপন হয় একটি বিশেষ গোষ্ঠীর উপর, এবং অনেক সময় দেখা গেছে এই অযথা কালিমা লেপনের কারণে অনেকে ভালো মানুষ থেকে সন্ত্রাসী হয়ে যায়। বিষয়টি জানতে চাইলে হলিউডের একটি ছবি “Catch a Fire” দেখুন; কিভাবে একজন শান্তিপ্রিয় কৃষ্ণাঙ্গকে একের পর এক অযথা হয়রানির পরে সে ANCতে যোগ দেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন শেতাঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হন। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ওই বেক্তি ধরা পড়েন এবং ম্যান্ডেলার সাথে জেল খাটেন, পরে ম্যান্ডেলার মুক্তির পর পর উনিও মুক্তি পান।
আর একটি বেপার, সব দেশের, সব জাতির, সব ধর্মের সব বড়ো বড়ো নেতাদের তাদের বক্তব্যে বা কথাবার্তায় একটু সতর্ক থাকতে হবে, কারণ তাদের কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর উপর উত্তেজিত কথাবার্তায় অনেক উগ্রবাদী চিন্তাধারার লোক তাদের উগ্রবাদী চিন্তাকে বাস্তবে রূপ নেওয়ার সাহস পাবে। ওই বেক্তির আর্মসের গায়ে অনেক সন্ত্রাসী লোকের নাম লেখা ছিল, এবং শুনেছি তার আগের কথাবার্তায় বড়ো কোনো বিশ্বনেতার কথাও আছে। অতএব এই জাতীয় কথাবার্তায় ওই নেতারা কিন্তু পরক্ষোভাবে উগ্রবাদ বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে উৎসাহিত করতে পারেন এবং এই ধরণের নিরহ মানুষের হত্যাকাণ্ডের দায়ভার তারাও এড়াতে পারেন না। আবারো বলছি, এই জাতীয় নেতা সব দেশে, সব জাতিতে এবং সব সমাজেই আছেন। আর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুধু একটি গোষ্ঠী বা একটি গোত্রের লোক করে না, এটি সব দেশের সব গোষ্ঠীর মধ্যেই আছে এবং এই জিনিসটি বুঝতে না পারলে প্রতিরক্ষার জন্য যদি ঘরে ঘরে কামান দাঁড় করিয়েও রাখেন তাতে কোনো কাজ হবে না।
এই জাতীয় ঘটনা নতুন নয় তবে এতগুলি নিরীহ মানুষের জীবন এভাবে নিভে গেলো তাই মন আমাদের স্বাভাবিকভাবেই অনেক বিষন্ন, সে জন্য আর কথা না বাড়িয়ে আবারো মৃত্যের আত্মার প্রতি মাগফেরাত কামনা করে এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে, তাদের পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শেষ করছি। আসুন আমরা যেমন ফ্রান্সের বেটিকলোন এবং চার্লি আব্দ মেসাকারের সময় সবাই একে অপরকে সমবেদনা জানিয়েছিলাম এবং সবাই একসাথে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড মোকাবেলার অঙ্গীকার করেছিলাম, তেমনি আবারো সবাই একসাথে হয়ে এই নারকীয় দানবদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই।
মুকুল

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন