বেলজিয়াম থেকে:-

COVID-19 বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং আমাদের দেশের ভাইবোনদের সতর্ক করতে আমার এই লেখা,

ফেব্রুআরি ২৮ তারিখে আমি বেলজিয়াম থেকে রোমে পৌছাই এবং World Food Program এ জয়েন করি।
এর আগে আমি জার্মানি থেকে বেলজিয়ামে পৌঁছাই ২৬ তারিখে।
এ সময়ে ইতোমধ্যে ইউরোপে COVID-19 হানা দিয়েছে এবং ইতালিতে ১টি ২ টি করে সংখ্যা বাড়ছে।

আমি ইতালি পৌঁছানোর আগেই WFP তে আমার বস এবং রোমে আমার বন্ধু ফিলিপো কে ভাইরাসের সংক্রামণ এবং ইতালির অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি, ওনারা আমাকে অভয় দেন যে, রোমে সবকিছু স্বাভাবিক চলছে, কোন অসুবিধা নাই, আমি আসতে পারি।
আমি ইতালি যাই, অফিস শুরু করি…

এদিকে, প্রতিদিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লগারিদমিক স্কেলে বাড়তে থাকে। প্রথম সপ্তাহ অফিস করার পর WFP থেকে আমাদের জানানো হয়, শুধুমাত্র গ্রুপ হেডরা ১০ মার্চ থেকে অফিসে আসবেন বাকি সকল (প্রায় ১০০০) কলিগরা বাসায় থেকে হোম অফিস করবেন।
এছাড়া ঘণ্টায় ঘণ্টায় আমাদেরকে মেইলে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

৯ মার্চ বাসায় ফিরে জানতে পারি আমার বাসার ৫০০ মিটার দূরে অবস্থিত একটি সুপার সপ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কারণ সেখানকার একজন কর্মচারি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
আমি মোটামুটি বাসায় বন্ধী হবার সকল আয়োজন সম্পন্ন করলাম বাজার সদাই করে।

এদিকে, রোমের রাস্তায় মানুষজনের চলাফেরা কমতে দেখলাম। ট্রেনে, বাসে ভিড় কমতে দেখলাম।
৯ মার্চ, রাত ১০ টায় আমার সহধর্মিণী আমাকে কিছুটা জোর গলায়ই দ্রুততম সময়ের মধ্যে বেলজিয়ামে ফিরে আসার জন্য বলে। আমি প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব না দিলেও পরে দ্রুততম সময়ে টিকেট কাটি এবং ১০ তারিখ সকালে বেলজিয়ামে ফিরে আসি।

আমরা বেশকিছু পরিস্থিতি বিবেচনায় বেলজিয়ামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই,
১। দ্রুত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে,
২। বাসায় থেকে অফিস যদি করতেই হয় তাহলে যেখানে থেকে আমি তুলনামূলকভাবে সেফ থাকবো সেইখানেই আমার থাকা উচিৎ
৩। যেকোনো সময় ইতালির সাথে সারা ইউরোপের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
৪। বেলজিয়ামের হেলথ সিস্টেমের উপর আমার কিছুটা বেশি আস্থা

যাইহউক,
আমি ১০ মার্চ রোম থেকে ফ্লাই করে ব্রাসেলসে নামি, কিন্তু কোন বিমানবন্দরেই আমাকে কোন ধরনের স্ক্রিনিংএর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি যেটি আমাকে খুবই অবাক করে। আমি বাসায় ঢুকেই পরনের কাপড় আলাদা এয়ারটাইট ব্যাগে রাখি, এবং ভালোভাবে গোসল করি।
আজকে ২১ তারিখ, আমি রোম থেকে আসার আজকে ১২ দিন। এই ১২ দিন আমি নিজেকে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী রেখেছি, যদিও স্ত্রীর কাছে যাইনি এটি বলা মিথ্যা হবে। তবে। আমরা ২ জনই এই প্রায় ২ সপ্তাহ ঘরে রয়েছি, শুধুমাত্র লণ্ড্রী এবং বাজার করতে ২ বার আমরা বাইর হই/ অর্থাৎ যতটা সম্ভব নিজেদেরকে আমরা কোয়ারাইন্টাইন অবস্থায় রাখি। আমরা পুরোপুরি সুস্থ আছি ভালো আছি, তারপরেও আমরা স্বেচ্ছায় নিজেদেরকে গৃহবন্দী রেখেছি কেননা, আমরা জানি না যে, আমরা এটির পটেনশিয়াল ক্যারিয়ার কিনা এবং আমরা নিজেরাও কোনভাবে আক্রান্ত হতে চাইনা।

আমার বন্ধু ফিলিপো বা আমার বস মি. রোজারিও সহ বেশিরভাগ ইটালিয়ান ভেবেছিলেন, পরিস্থিতি এতোটা খারাপ হবেনা, সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে, এটাই ছিল ইটালিয়ানদের সবথেকে বড় ভুল। সেই একই পথে হাটতে যাচ্ছিলো বেলজিয়াম, জার্মানি কিংবা ফ্রান্স। তবে, এখন যে পরিস্থিতি তাতে অলরেডি অনেক দেরি হয়ে গেছে। মিরাকেল কিছু না ঘটলে এই সঙ্কট আমাদের অনেক ভোগাবে।

এই মুহুর্তে ইউরোপের কি অবস্থা এটা সকলেই জানেন মিডিয়া মারফৎ। বাড়তি বলার আছে বলে মনে করি না।

আমাদের দেশে যারা ভাবছেন, ইউরোপ আমেরিকা কাফের তাই তাদের উপর গজব পড়েছে, আমাদের কিছুই হবে না!! আপনারা ভুল করছেন, বড় ভুল।

১৮ কোটি মানুষের দেশে, একজন মানুষ আরেকজনের ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ছাড়ে। এখানে করোনা হলে, ম্যাছাকার হয়ে যাবে। আর যদি করোনা নাও হয়, এতো খুশি হবেন না। আমাদের অর্থনীতি যেসকল দেশের উপর নির্ভরশীল তাঁরা অলরেডি আক্রান্ত, সেই ঢেউ আমাদের দেশে আছড়ে পরতে আর বেশী দেরী নাই। সো, ইন ইদার ওয়ে, উই আর ডুমড 🙁

পরিশেষে একটাই কথা, ঘরে থাকুন, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন, অন্যকে, সরকারকে এবং দেশকে এই মহা দুর্যোগ মোকাবিলায় সাহায্য করুন।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন