সংবাদ শিরোনাম! আবরার হত্যার রেশ ধরে  বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে! সাধুবাদ জানাবো? নিন্দাবাদ জানাবো? জানিনা..। আপাততঃ সময়ের হাতে ছেড়ে দিলাম। তবে পাল্লাটা সমর্থনের দিকেই কিঞ্চিৎ ঝুলানো। কেন সে ব্যাখ্যায় এখন যাবনা। তবে সময়ের হাতে কেন ছেড়ে দিলাম? 

১. বাংলাদেশে সিদ্ধ-নিষিদ্ধের মানদন্ডটি তো ক্ষমতার অপব্যবহারে মূহুর্তের ব্যবধানে আপেক্ষিক ভারসাম্যতা হারিয়ে একে অপরের সাথে স্হান বদল করে ফেলে। আর তাই ই যদি না হতো তাহলে তো এই ছাত্র নামধারী দানবগুলো তৈরী হওয়ারই সুযোগ পায় না। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও যে তলের স্রোত ধারায় এটি বজায় থাকবে না তার নিশ্চয়তা কে দিবে? বাংলাদেশে এই তলের স্রোতের তীব্রতা যে খুব বেশী। এতোই বেশী যে আমাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দেশের সামান্য পানিটুকুও যে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওপারে যেতে চায়!

২. আবরারের পোস্টে যে বার্তা আমরা পাই তাতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের জন্যে তো কোন আকুতি নেই?  ভিসির পদত্যাগের জন্যে কোন আবেদনেরও গন্ধ নেই তাতে। তার মৃত্যুর প্রথম কারন কোনটি? দেশের স্বার্থ রক্ষা না ছাত্র রাজনীতি? সেতো কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো না। তাহলে এ দু’টো বাস্তবায়নের জন্যে প্রশাসনের সব মহল এখনই কেন উঠে পড়ে লাগলো? এ রাজনীতির জন্যে কালকেই তো আর একজন আবরার মারা যাচ্ছে না। ওকে.. জানি প্রাইমারিকে উপেক্ষা করে সেকেন্ডারী কে নিয়ে টানাটানি করাটা  আমাদের জাতিগত পূরণ অভ্যাস। কিন্তু তাতে যে বিশেষ করে ছাত্র সমাজ এবং দেশ প্রেমিক বিবেকবান জনগনের মনে ফুঁসে ওঠা ক্ষোভের  মনোযোগটা অন্যদিকে ঘুরে যাচ্ছে? খানিকটা প্রশমিত ও হবে বৈকি? পূরণ চাল। দীর্ঘদিনের চর্চার ফলে আমাদের প্রশাসন এ বিষয়ে বেশ দক্ষতা ও বিচক্ষণতা অর্জন করেছে তা আমরা জানি। গ্যাসের পরিবর্তে প্রতিবেশীদের কাছে এটা রফতানি করার জন্যে  তারা চেষ্টা করে দেখতে পারতো।

৩. আবরারের পোস্টে প্রধান ক্ষোভটা ছিলো দেশের স্বার্থকে বিলিয়ে দিয়ে প্রতিবেশী দেশের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তি নিয়ে। তার এই শঙ্কা যে অমূলক নয় সে বিষয়ে এখনই আসবো। তবে এহেনো দেশপ্রেমিক এ মাটিতে বেড়ে উঠুক তা আমাদের প্রতিবেশী এবং এদেশে জন্ম নেয়া তাদের সুহৃদদের কোন ভাবেই কাম্য হতে পারে না। সুতরাং কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আবরার নেই হয়ে গেল!? এটি আপনার আমার জন্যে ও একটি সতর্কবাণী ই বটে। 

আসুন আমরা এবারে আবরারের শঙ্কাটিকে একটু তলিয়ে দেখি। এক্ষেত্রে আমাদের অতি বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ-অজ্ঞ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারে দেয়া বক্তব্যকেই সত্যি ধরে এগোই। তার বক্তব্য মতে আমরা ভারতকে গ্যাস দিচ্ছি না। তা হলে কি করছি? আমরা বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করে তা সিলিন্ডারজাত করে ভারতের কাছে রফতানি করবো। বাহ্.. বেশ বেশ..। জবরদস্ত একখান আইডিয়া। জবরদস্ত চুক্তি। তা এতে করে সিলিন্ডার প্রতি আমাদের লাভের অংকটা কি থাকবে মন্ত্রীজী? জানতে পারি কি? আপনার কাছে আমার আরও দু’টা প্রশ্ন আছে। আমার জানামতে ভারত তো বর্তমানে কোন বানিজ্য অবরোধের মধ্যে নেই। তাহলে গ্যাস সমৃদ্ধ দেশগুলোর সাথে ভারতের বানিজ্যের সব দরজা জানালা তো বন্ধ হয়ে যাবার কথা নয়? নাকি গ্যাস সিলিন্ডারজাত করার প্রযুক্তি এখনো তারা অর্জন করেনি? আমিতো শুনেছি তারা পারমানবিক ক্ষমতা সম্পন্ন একটি দেশ। প্রযুক্তি উন্নত অন্যসব দেশের মতো তারা মহাকাশ, চন্দ্রাভিযানেও যায়। তাহলে গোমরটা কি? একটু খুলে বলবেন মন্ত্রীজী? জানি ভারত আমাদের ভালো বন্ধু! আমাদের রোহিঙ্গা সংকট ইসুতে জাতিসংঘে তারা আমাদের পক্ষে ভোট না দিয়ে বিরত থেকেছে!? ভুল শুনেছি কি? এটাও একটু পরিস্কার করার অনুরোধ থাকলো। তবে আগেরবারে মাইকের সামনে আপনাকে খুব আস্হাশীল মনে হয়নি। তাই এবার প্রেসে আসার পূর্বে আবোল তাবোল না নিয়ে আমদানিকৃত সরেস মাল সেবন করে আসিয়েন। মাত্রা জ্ঞান জানা না থাকলে আমার কাছ থেকে শিখে নিতে পারেন। প্রায় তিন যুগ হতে চললো এ বিষয়ে শিষ্যত্ব নিয়েছিলাম। মিথ্যে বলছি না। 

আর একটি বিষয়। এটি সবার জন্যে। যে দাবি এবং কষ্ট বুকে নিয়ে আবরার চলে গেলো তা কিন্তু সহজে উবে যাবার নয়। কারণ এ বুককে সে পাথর করে দিয়ে গেছে!!


ফরিদ তালুকদার / অক্টোবর ১১, ২০১৯

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন