ফ্লোরিডা থেকে:-

“খুব দামী লেখা লিখেছো হে, সোনার কলমে বুঝি?”
প্রত্যুষে পাখীটি বলে।
পাখীর মুখে সাহিত্যালোচনা আমার ভাল লাগে না,
আমি চুপ করে থাকি।

আত্মবিদ্রুত সারারাত জেগেছি শব্দ শিকারে ।
ঝেড়েছি শব্দের মিসাইল
ভারী ও ব্যভিচারী,
শব্দেরা পালাবে কোথায়?
শব্দেরা ধর্ষন ফিল্ডে বিপন্ন নারীর মত।

ক্ষুধা পেয়েছিল খুব ।
দু পেগ দুধ পান করেছি দু বোতল হুইস্কি মিশিয়ে,
ক্ষুধা কমে নি
অথচ ডুমুর পেকেছে চোখে। অনেক অনেক লাল ডুমুর,
সিরিয়ার লাল রক্তের মত বা
রাখাইনের রক্তস্রাবা নারী ….

আমি কবি, গহিনের গভীরে চিংড়ির মত বাস,
চিন্তার তলানী ছুঁয়ে ।
এবং অত-শত আমি কী-ই বুঝি
বা বোঝার কী-ই দরকার !

“তুমি যা চাও, আমি তা চাই না ।”
“আমি কি কিছু চেয়েছি ?”
পাখী বলে।
ভুল ভাঙ্গে।
কিছু ভাবতে যেয়ে, কিছু বলে ফেলেছি;
পাখীকে নয়, গহিনের অন্য কাউকে।
যা মনে ছিল,তাই উক্ত হয়েছে আচানক।

আমি পাখীকে উত্তর দেই না,
আরও গভীরে নেমে যাই।
“হ্যাঁ, ইচ্ছে হয় অবশ্যই, তীব্রভাবে,
কিন্তু কারে কই, কারে কই বলো ,
এই সবনষ্ট চিন্তার নয়-ছয়-দশ কাহন?”

আমার মনের ভিতরে সুরঙ্গ,
গভীর ও অন্ধকার ।
কত গভীর নিজেও জানি না।
মহাকাশের কৃষ্ণ বিবরের সমান?
বেশী ? না কম বুঝে উঠতে পারি না।
জটিলতার এখানেই শেষ নয়:
পরিমাপটা জানলেও স্পস্ট করে,
কি যে পার্থক্য হত, তাও বুঝতে
পারি না, কী মুশকিল!

চিন্তাগুলো মানুষের মত।
কেউ লম্বা, কেউ বেটে। কেউ লোভী, কেউ প্রেম কাতর,
কেউ বন বিড়ালের মত লিবিডো তাড়িত ।
ওরা মশাল হাতে সুরঙ্গে হানা দেয়।
বলি “থামো, থামো , বেতমিজের দল।
দেখো না কেমন ধ্বংস চলেছে চারিদিকে, ধর্ষন!
মানবী-হরিণের মাংস এখন মানবতা,
শিশু আর শিশু নয় , নারী ।
দেশ – দেশ নয়, নারী ।
বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্যালয় নয়, নারী ।
নর- নর নয়, নিপুন ধর্ষক!
অথবা নীরব দর্শক।

কে কার কথা শোনে?
অযৌক্তিক বোধ ও বিশ্বাসের সমন্বয় মানুষ।
আমার বোধের মতই:
অংশত সত্য ,
অংশত মিথ্যা,
অংশত অহংবোধে স্ফীত।

আমার বুকের বাম দিকে ব্যথা করে।
ধোপার ধোয়া কাপড়ের মত মোচড় দেয়।
পাখী ডানা ঝাপটিয়ে বলে,
“হৃদয় হৃৎপিন্ড নয়,
হৃৎপিন্ডের ব্যথাকে হৃদয়ের ব্যথা বলে চালিয়ে দেয়া
এক ধরণের প্রতারণা।
তুমি তো সমতল বুকের মানুষ,
ভালোবাসা শুধুই ইন্দ্রিয় ইশারা নয়
তুমি কি তা বুঝতে পারো?”

আমি বলি, “চালাকি চলবে না, কথা দিয়ে কথা ঢাকা অন্যায়,
ইন্দ্রিয় বহির্ভূত জগত নিয়ে আমার কোন ব্যবসা নেই।
ঈশ্বর, ঈশ্বরী, ম্যাজিশিয়ান ও মুরব্বীগন সিরিয়া, বার্মা বা বাংলাদেশে
বিলয় ও বিধ্বংসের বিষ নিয়ে মেতে থাকুন।
আমি শুধু সবগুলো ইন্দ্রিয় উন্মুক্ত করে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা চাই।”

পাখী দাঁত বের করে হাসে ।
বিদ্রুপের ঝুঁটিওয়ালা পাখী।

এপ্রিল ২১, ২০১৮

১ মন্তব্য

  1. আমি বলি, “চালাকি চলবে না, কথা দিয়ে কথা ঢাকা অন্যায়,
    ইন্দ্রিয় বহির্ভূত জগত নিয়ে আমার কোন ব্যবসা নেই।
    ঈশ্বর, ঈশ্বরী, ম্যাজিশিয়ান ও মুরব্বীগন সিরিয়া, বার্মা বা বাংলাদেশে
    বিলয় ও বিধ্বংসের বিষ নিয়ে মেতে থাকুন।
    আমি শুধু সবগুলো ইন্দ্রিয় উন্মুক্ত করে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা চাই।”

    পাখী দাঁত বের করে হাসে ।
    বিদ্রুপের ঝুঁটিওয়ালা পাখী।..খুব সুন্দর

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন