একদিন সন্ধ্যায় শাহারিয়ার অন্য দিনের তুলনায় একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে। মুখের দিকে চেয়ে অনুমান করলাম অন্য সময়ের থেকে সে একটু বেশীই বিচলিত।কারণটা জিজ্ঞেস করতেই মনে হলো চুপসে গেল। আমার মুখের দিকে একবারও তাকালনা। চুপচাপ রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। অনেকবার তাকে খেতে ডাকলাম, মিছেই ডাকাডাকি করে খাবার ঢেকে রেখে রুমে গিয়ে দেখি তার দু’চোখ ভিজে দরদর কর পানি পড়ছে। এবার আমিও চিন্তায় পড়লাম। জীবনে যে মানুষটিকে বিপদে আপদে ধৈর্য ধরার কথা বলতে শুনেছি সে কিনা আজ কাঁদছে! তার চোখের পানি আর কখনো দেখেছি বলে মনে পড়েনা। একটু আগেও যে বিকেলটা স্বচ্ছ পরিস্কার দেখাচ্ছিল তা যেন মুহূর্তেই ঘোলা হতে শুরু করেছে। শাহারিয়ার আমার বর। আগাগোড়া একজন ধর্মীয় অনুশাসনের মানুষ, বিশেষ কারণ না থাকলে সহজে নামায কামাই করে না। উপজেলা শহরে তার চালের আড়ৎ, মুদি দোকান আর নতুন যোগ হয়েছে রড সিমেন্টের ব্যবসা।

যখন প্রথম শাহারিয়ারের বউ হয়ে আসি তখন দিন আনতে দিন খাই অবস্থা ছিল। এখন মাসে এমনকি বছরেও অভাবের টের পাই না। ছেলে মেয়ে নিয়ে দারুণ সংসার আমার। বেশ সূখে আছি। সংসারের চার পাশের মানুষের আমার প্রতি বাড়তি আকর্ষণ আছে। য়সাওয়ালার বউরা সাধারণত সমাজের অন্য মহিলাদের কাছে বিশেষ মর্যাদায় থাকে আমার ক্ষেত্রে একটু বেশিই বরং কম কিছু নয়।অনেক চেষ্টয়া জানতে পারলাম শাহারিয়ার দ্বিতীয় বিয়ে করতে চায়। কথাটা শোনার পর মনে হলো মাথায় কে যেন বর্জাঘাত করেছে। স্বপ্নের মতো তার ভালোবাসার দিনগুলির কথা মনে পড়তে লাগল। অভাব অনাটনে মোটা কাপড় এনে বলত অপেক্ষা করো আমি খুব চেষ্টা করছি। ব্যবসাটা দাঁড়িয়ে গেলে অনেক সুন্দর কাপড় দেবো তোমায়। কাপড়টা হাতে নিলে আমাকে বুকের সাথে চেপে ধরে কপালের চুলগুলো সরিয়ে যখন চোখে চোখ রেখে কথা বলত তখন মনে হত আমার থেকে বড় ভাগ্যবতী জগতে আর নেই। মুহূর্তে সেসব দিনগুলো আমার কাছে ফিকে আর ধূসর মনে হলো। অসংখ্যবার তার ভালোবাসার উষ্ণতায় জীবনের ফিকে হওয়া রং উজ্জ্বল আলোর মতো চকচকা হয়েছে। তার আর আমার জীবনের মাঝখানে কখনো কাউকে ভাবার মতো অবসর পাইনি। কখনো কোনদিন কল্পনাও করতে পারিনি তার আর আমার মাঝে তৃতীয় কোন মানুষ থাকতে পারে।কোন মুখে আমার কাছে দ্বিতীয় বিয়ে করার অনুমতি চাইল বুঝিনা। যাকে বিয়ে করতে চায় সে সদ্য-বিধবা এবং দুই সন্তানের মা। খুব কষ্টে শিষ্টে দিন পার।অবস্থা এতোটাই শোচনীয় যে দুপুর হলে বাচ্চাদের জন্য কোথা থেকে খাবার আসবে সেটা জানা নেই বিধবা মায়ের। নিরুপায় হয়ে বেঁচে থাকার আশ্রয় খুঁজছে হন্যে হয়ে বিধবা মহিলাটি। সেটা হতেই পারে কিন্তু যখন শাহারিয়ারের ভেজা পল্লবে চিকচিকে জলের বিন্দু দেখলাম তখন বুঝতে বাকী নেই জল অনেকদূর গড়িয়েছে। না হলে বিধবার দুঃখ কষ্ট ভেবে অশ্রুপাত কারার মানুষ শাহারিয়ার না বিষয়টি ভালো করেই আমি জানি। শাহারয়িারের কাছে জানতে চাইলাম, কেন সে এতটা উতলা দ্বিতীয় বিয়ের জন্য।

নিশ্চয়ই মহিলাকে সাহায্য করার আরও অনেক উপায় আছে। চাইলে তাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা যেতে পারে, বিয়ে করার কী প্রয়োজন! আর সমাজে কত মানুষ কত রকমের অসুবিধায় দিন পার করছে এজন্য কান্নার কি হলো? আমিতো তোমাকে এর আগে কখনো কাঁদতে দেখিনি! বিষয়টা আসলে কতদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে আমাকে খুলে বলো। সে চুপ রইল, মুখ ফিরিয়ে দেয়ালের সাদা আস্তরণের দিকে নির্বাক চেয়ে রইল। পাশে আমি তাকে কত কমের উপহাসমূলক কথা বলতে লাগলাম সে কোনো শব্দ করলনা। অন্য সময় সে অপ্রত্যাশিত কথা শুনলে রাগে আগুনের মতো জ্বলে ওঠত কিন্তু আজ আমার কথায় তাকে নীরব দেখে ভিতরে ভিতরে জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছি। শেষে রাগে তাকে রেখে অন্যঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ভাবতে থাকি। আমার স্বামীকে আরেকজন নারীর সাথে ভাগাভাগি করতে হবে। তার ভালোবাসা,হাসি, রসিকতা এগুলো আমি ছাড়াও আরেকজন নারী উপভোগ করবে? সে আমাকে ছাড়াও আরেকজন নারীকে স্পর্শ করবে, আর তাকে ভালোবাসার কথা শোনাবে! এটা অসম্ভব, মেনে নেওয়া যায় না। চরম ক্ষোভ, দুঃখ, আর অপমানের জ্বালায় আমি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। আমি ওর জন্যে কী না হইনি? একজন স্ত্রী, প্রেমিকা, ডাক্তার, সেবিকা, গৃহিণী। আমি ওর বাচ্চার মা! চরম দুর্দিনে ওর পাশে থেকে অভাবের সাথে নিত্য সংগ্রাম করেও কত খুশি ছিলাম আমি, সেগুলো কি করে ভুলে যায়! যে কখনো কোনো মেয়েমানুষের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেনা সে কিনা আজ এক মহিলার জন্য না খেয়ে পড়ে পড়ে নীরবে কাঁদছে! কীভাবে পারলো আমাকে এতোটা অপমান করতে? মনে হচ্ছিলো আমি হয়তো বেশি ভালো না বা বেশি সুন্দরী না কিংবা অল্পবয়সী না। অথবা ভেঙ্গে গেছে যৌবনের মৌবন। শরীরের ভাজে এখন আর হয়ত উষ্ণতা খুঁজে পায় না। কিংবা শুধু আমি যেন ওর জন্য যথেষ্ট ই না!এজন্যই দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলছে হয়ত।ভবেছিলাম এ জীবনটা অনন্তকাল ধরে চলতে থাকবে, যেন কোনদিনও শেষ হবে না।যেন কখনও কিচ্ছু বদলে যাবে না, বদলাতে পারে না। অনন্তকালের শয্যাসঙ্গী হয়ে আমার মাঝেই সূখ হাতড়ে বেড়াবে শাহারিয়ার। পৃথিবীর অন্য কেউ এই অধিকার কেড়ে নেওয়ারও সাধ্য রাখেনা। মুহূর্তে তার ভালো মানুষির মুখোসটা আমার কাছে স্পষ্ট হতে লাগল। তার চিল্লায় যাওয়া, ধর্মে কর্মে মনোযোগ, আমাদের জন্য সর্বদা ব্যাকুলতা আমার কাছে নিতান্ত তুচ্ছ মনে হতে লাগল। আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। শাহারিয়ার আর রুম থেকে বের হলোনা। আমি বাচ্চাদের নিয়ে বাবার বাড়ি চলে গেলাম।

প্রায় পনের দিন পার হবার পর একদিন সকালে শাহারিয়ার আমার বাপের বাড়ি উপস্থিত। বড় ভাই প্রচন্ড পরিমান রেগে আছেন। যেখানে আমার জীবনের সাথে এত বড় একটা ঘটনা জড়িত সেখানে সমস্যাটা ভাই-ভাবীকে না জানিয়ে পারিনি।বাচ্চারা বাবাকে দেখে খুব খুশি। পনের দিনের দূরত্বে আমার মনটাও কেমন বিরহের করুণ সূরে ভিজে উঠল। শাহারিয়ারের মুখের দিকে তাকাতেই কোথায় যেন রাগ মিলিয়ে গেল। আমি তার সামনে গেলামনা কিন্তু আড়ালে তার শুকনো মুখটা দেখে মায়ায় বুকটা হূ হূ করে উঠল। ভিতরে কি পরিমান কষ্ট লাগছিল তারপরেও তার সামনে গিয়ে জানতে চাইলাম,- কেমন আছো। দেখলাম মুখটা বির্বণ আর ফ্যাকাশে। আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে।চোখদুটো ঘোলাটে আর দু’ফোটা জল চোখের পাতায় ছলছল করছে। প্রথমে মনে হলো হাতটা ধরে বলি অনেক হয়েছে, আর কাঁদতে হবেনা। চলো আমারা আবার আগের মতো সুন্দর করে সংসার করি। মুর্হূতে মনে হলো ভেজা পল্লবে যে বিরহের রাগিনী দেখলাম সেটা হয়ত আমার জন্য না, ওই মহিলার জন্য। তখন আবার তার সামনে থেকে চলে যেতে চাইলাম। আমি উঠতেই সে আমার হাতটা ধরে বলল, -আমি ও চিন্তা বাদ দিয়েছি। চলো বাচ্চাদের নিয়ে বাড়ি ফিরে যাই। আমিও খুশি হয়ে কাপড় গুছিয়ে না খেয়েই রওয়ানা দিলাম। আনন্দের ঝড় এমন করে মনের ভিতর দোল খাচ্ছিল আমি না খাই অন্তত আমার স্বামীকে শ্বশুড় বাড়ী থেকে উপোস নিয়ে যাওয়া ঠিক হবেনা মনেই ছিলনা। বাচ্চারাও বাড়ি যেতে চায়। ওদের স্কুল , খেলাধূলা সবকিছু থেকে দূরে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে পড়ছিল। শেষে না খেয়েই আমারা চলে আসলাম। বাড়িতে এসে শাহারিয়ারের মাঝে বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ করলাম। সে আবার আগের মতো ব্যবহার করছে। চেহারায় এখন আর বিষন্নতার ছায়া নেই । প্রতিদিন বাড়ি ফেরার পথে আমার জন্য বাচ্চাদের জন্য কমবেশী কিছু নিয়ে আসে। সংসারে আবার সূখের জোয়ার বইতে লাগল। আমিও শাহারিয়ারের মানসিক পরিবর্তনে খুশি হয়ে ওই মহিলার কথা ভুলেই গেলাম। আমি জানিনা সেই মহিলা ও তার বাচ্চাগুলোর শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিলো। বহূদিন ধরে শাহারিয়ারের সাথে এ ব্যপারে কোনো আলোচনা হয়নি কেননা, পাছে খুশিই হয়েছিলাম এই ভেবে, আমার স্বামীর মাথা থেকে দ্বিতীয় বিয়ের ভূত তাড়াতে পেরেছি। এরপর শাহারিয়ার আর কখনোই দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রসঙ্গ উচ্চারণ করে নি, যার কারণে আমিও খুব খুশি। নিজের স্বামীকে ধরে রাখতে পেরেছি সেই আনন্দে আত্মহারা! কিন্তু তখনও জানতাম না আমার প্রিয়জনের সাথের প্রিয় মুহূর্তগুলো দ্রুত ফুঁরিয়ে যাচ্ছে। একদিন রাতের খাবার শেষ করে দুজন ঘুমাতে যাব হঠাৎ ও বলল, ঘাড়ের পেছনের রগটা খুব টান পড়ছে। শরীরটা কেমন অবসন্ন লাগছে। আমি রসিকতা করে বললাম, দ্রুত কাজ গুছিয়ে তোমার কাছে আসছি, দেখবা সবকিছু ঠিক করে দেবো। কিন্তু রসিকতা শেষ হবার আগেই ওর বমি হলো। অবস্থা দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম,বাচ্চারা পাশে কাঁদতে লাগল। শাহারিয়ার বাচ্চাদের বুকের কাছে টেনে এনে মাথায় হাত বুলিয়ে কি যেন বলতে চাইল স্পষ্ট বুঝতে পারিনি। এত রাতে কোথায় কার কাছে গিয়ে সাহায্য চাইব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বড় ছেলেকে প্রতিবেশীর কাছে পাঠালাম। আবার বমি করে শাহারিয়ার আমার কোলে মাথাটা এলিয়ে দিল। আমি চেঁচিয়ে প্রতিবেশীদের ডাকতে থাকি। চোখের সামনে তখন অন্ধকার  দেখছি। মুহূৃর্তেই ওকে হারাবার ভয় আমার কলিজা মোচড় দিয়ে ওঠে। কিচ্ছু করতে পারিনি আমি, সে রাতেই শাহারিয়ার আমাদের বিদায় জানিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেল।

আচমকা প্রিয়জনের মৃত্যুতে আমি পুরো হতবিহ্বল হয়ে পরি। যে মানুষটার সাথে আমি আমার পুরোটা দাম্পত্য জীবন কাটিয়েছি, তাকে এক মুহূর্তের মাঝে আমার থেকে, বাচ্চাদের থেকে সৃষ্টিকর্তা ছিনিয়ে নিল। এরপর দিনে তার কথা স্মরণ করে নীরব অশ্রুপাত করেছি। রাতে ফুফিয়ে কেঁদে কেঁদে বালিস ভিজিয়েছি। কত কত স্মৃতি আমার মনের মাঝে উঁকি দিয়ে খের পাতা ভিজিয়ে দিত তা আমি-ই মাত্র জানি। হয়তো বা এক মহাকাল অনন্ত যুগ কাঁদব ওর জন্য কিন্তু নিয়তি আমাদের সব ভুলিয়ে দেয়। সে সময় কোনকিছু দেখাশোনা করে রাখার মতো অবস্থা আমার ছিল না। ব্যবসা সম্পর্কে নূন্যতম ধারণাও নেই। কর্মচারীর দেয়া মাস শেষের টাকা দিয়ে সংসার চালাই। ব্যবসার হিসেব নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করিনি। অযতে অবহেলাতে একে একে সব হারাতে শুরু করলাম। প্রথমে আমাদের ব্যবসা, এরপর বাড়ি হারালাম।ওর যে এত ঋণ ছিল জানতাম না। সিমেন্টের মালিক ভাউচার দেখিয়ে বলল, গত ছয়মাস ধরে মাল এনেছে আর বিক্রি করেছে। অনেক টাকা বাকী পড়ে আছে। আমার মনে হলো,ব্যবসার অবস্থা এতটাও খারাপ কখনো শুনিনি যাতে ডিলারের এতটাকা বাকী পড়তে পারে। মুহূর্তে সেই মহিলার কথা মনে পড়ল। তাহলে কি সেই মহিলাকে অর্থ সাহায্য দিয়ে ব্যবসার এই অবস্থা করেছে! সব ঋন পরিশোধ করতে গিয়ে একেবারেই পথে বসলাম। বাচ্চাদুটো নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো ভেবে কূল কিণারা করতে পারিনা। শেষে বাচ্চাদুটো নিয়ে আমার ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠলাম।

হঠাৎ আমাদের উপস্থিতি ওদের ভালো লাগেনি সেটা বুঝতে পারছি বেশ। আমাদের অলস দিনযাপণে ভাবীও দিনে দিনে অতীষ্ট হয়ে উঠছিলেন। খুব ইচ্ছে হতো ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। সে সময় আমার দরকার ছিল একটি চাকরি, কিন্তু যেখানে স্বামীর ব্যবসা সম্পর্কেই আমার ধারণা নেই সেখানে বাইরের জগতের আমি কি-ইবা জানি। পড়াশোনা যা আছে সেটাকে কখনো ব্যবহার করে দেখিনি। ছিল না কারো সাথে বিশেষ চেনাজানা। আমার ভূবন জুড়ে সর্বদা একটা মানুষই বসবাস করত। আর তাকে ছাড়া জগতের আর কিছু আমার বোধে ছিলনা। বাচ্চাদের নিয়ে ঢাকায় গিয়ে কিছু করব এমনও সাহস পাচ্ছিনা। ওদের লেখাপড়াও প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।মানুষের দয়ায় এভাবে কতোদিন মাথা গুঁজে পড়ে থাকা যায়? নিজেদের জন্য একটা আলাদা বাসার প্রয়োজন খুব বেশি করে অনুভব করলাম। সারাক্ষণ জুড়ে একটা হাহাকার বুকের মধ্যে বিরাজ করে। শাহারিয়ার বেঁচে থাকতে কতো সূখের দিন ছিল আমাদের। ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করার প্রয়োজনই ছিল না, তাই নিজেকে কোন বিষয়ে পারদর্শী করে তোলাও জরুরি মনে হয় নি। সে চলে যাওয়ার পর জীবন যে এতোটা কঠিন হয়ে গেছে আমি প্রতিটা দিন তাকে অভাব অনুভব করি। হৃদয়ের প্রতিটা অংশ দিয়ে ওকে খুঁজে ফিরি। কী করে মানুষেরজীবন এতো ভয়ানকভাবে পাল্টে যায় ভেবেই পাইনা। চিন্তা আর উৎকণ্ঠায় দিন পার করছি।

হঠাৎ একদিন আমার ভাই আমাকে ডেকে তার পরিচিত এক বড় ভাইয়ের কথা জানালেন। তিনি নাকি বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছেন।ভালো মানুষ, চমৎকার আচার ব্যবহার আর বড় চাকুরে। কবে, কোনদিন ভাইয়ের সাথে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন জানিনা। নিজের জীবনের এতবড় সংকটে বাড়িতে কে আসে কে যায় সেটা খেয়াল কারার সময় পাইনি। তিনি চান আমি তার দ্বিতীয় স্ত্রী হই।একটা নিরাপদ আশ্রয় আমারও চাই কিন্তু বাচ্চাদুটোকে আমি অকূল পাথারে ঠেলে দিতে পারিনা। বুঝতে পারলাম, একজন মায়ের কাছে জীবনের নিরাপত্তা আর নিশ্চয়তার চেয়ে বাচ্চাদের নিয়ে কষ্টেশিষ্টে জীবন যাপন অনেক মধূর। ওরাও কিছুটা বুঝতে শিখেছে। এরকম ঘটনা শুনে চুপ হয়ে ওরা আমার কাছাকাছি থাকে। মনে হল,আমাকে হারানোর অজানা আশংকা ওদের কচি বুকে শেলের মতো বিধছে কিন্তু উপায় কিছু বের করতে পারছিনা। শেষে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার ভিতর যে হাহাকার চলছে সেটা জানিয়ে ভাইয়ের কাছে বিয়ের ব্যপারে আমার অমত জানিয়ে দিলাম। জানতে পরলাম বাচ্চাদের মেনে নিয়েই ভদ্রলোক আমাকে বিয়ে করতে চান। ভাইকে জানালাম, আমি তার সাথে সামনা সামনি কথা বলতে চাই। মনে হল ভাই কিছুটা বিরক্তই হলেন। অভিভাবক হিসেবে তার মতমতকে বিশ্বাস করে সরাসরি বিয়েতে মত দিলে ভাই মনে হয় খুশিই হতেন। অনিশ্চয়তার মধ্যে আমি থাকতে চাইলামনা।

শেষে ভদ্রলোকের সাথে একদিন দেখা করলাম এবং তাকে জীবনের পরম সত্যগুলো জানালাম। বাচ্চাদের ব্যপারে তারকাছে স্পষ্ট মতামাত জানতে চাইলাম। বুঝতে পারলাম, আমি জীবনের সংকটগুলোকে যে আবেগ দিয়ে তার কাছে উপস্থাপন করছি তিনি সেটাকে সেভাবে গুরুত্বের সাথে আমালে নিচ্ছেননা বরং আমার শাড়ী-ব্লাউজের পাড়ের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কি যেন অনুভব করছেন। যখন কিছুটা বিরক্ত হয়ে উঠে যাচ্ছিলাম তিনি আস্বস্ত করলেন বাচ্চাদের ভাড় তিনি সাচ্ছন্দ্যে নিতে চান। আমিও বিয়েতে রাজি বলে চলে আসলাম। নিয়তির কি নির্মম পরিহাস। একজন নারী হিসেবে একজন অভিভাবক চাই আমার। চাই নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা ইত্যাদি। যৌবনের চাহিদাকে না হয় মাটিচাপা দিয়ে মৃত ঘোষনা করলাম কিন্তু জীবনের প্রয়োজনকে অস্বীকার করি কিভাবে! ভদ্রলোকের স্ত্রী বেশ কয়েকটি রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। ভালো করেই বুঝতে পারছি আমার তাকে জীবনের নিরাপত্তা আর নিশ্চয়তার জন্য প্রয়োজন হলেও আমাকে তার যৌবনের চাহিদার প্রয়াসেই প্রয়োজন। এখন প্রকৃতির মায়াজালে আমি বন্দি এবং পরম অসহায়। আজ নিজের অস্তিত্বের সংকটে এক যৌবন পিঁপাসু মানুষের রাতের দেহ তৎপরতার উন্মাদনার আকাংখা আমাকে বহূদিন আগের সেই বিধবা মহিলার কথা মনে করিয়ে দেয়। যাকে আমার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চেয়েছিল।

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধটিপস ফর স্টুডেন্ট ভিসা ও বিজনেস ইমিগ্রেশন টু কানাডা।
পরবর্তী নিবন্ধপরবাসী ব্লগের ফেসবুক গ্রুপ বিষয়ক
��এই আমার পরিচয়�� >>>>>>><<<<<<<<<< সত্য স্বীকারোক্তি এবং একটি বাস্তবতা বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে আমার ধরনীতে আগমন। জন্ম হয়েছিল সলিতার আলোয়। ধাত্রী যমুনার মা। যমুনার মা নিপুণ ধাত্রী, তবু তার কেন যেন মনে হয়েছিল পৃথিবীর মুখ দেখতে আমি নারাজ ছিলাম। স্বভাবতই শিশুরা জন্মের পর কাঁদে, কিন্তু আমি নাকি কান্নাই করিনি। হয়তবা করিইনি অথবা করছি কিন্তু অস্ফুটবাক। তাই বুঝি এখনো কম কথা বলি। যা হোক, কুপির আলোটা নিভে গিয়েছিল একবার। তখনি হয়ত পৃথিবীর প্রথম অন্ধকারের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। তাই বুঝি এখনো নির্জনতাই আমার বেশী পছন্দ। আলো আঁধারের জীবন দারুন উপভোগ করছি। উত্থান পতন তো থাকবেই জীবনে। ছেলে বেলার অনেক কথাই তো মনে পড়ে। আমি জন্মেছি যৌথ পরিবারে। আমার বাবা মেঝ ছিলেন বিধায় পরিবারের কর্তা প্রধান বড় চাচার ছেলে মেয়েদের প্রাধান্য ছিল বেশি। আমি ছিলাম সংসারের জীব মাত্র। মা ছিলেন কাজের জন্য প্রশংসাধন্য আর কাকি ছিলেন অকারণেই সংসার প্রধান। আগেই বলেছি আমি ছিলাম সংসারের একটা জীব মাত্র। মা আমাকে ছেড়ে দিয়ে কত কাজ করতেন কিন্তু আমি হামাগুড়ি দিয়ে কোথায় চলে যেতাম! সংসারে অতগুলো মানুষ থাকতে আমি জীবের খবর আর কে রাখে! অনেক ধান হত আমাদের। মা ধান সিদ্ধকরা, রোদে শুকানো, বারা ভানা ইত্যাদি নিয়ে প্রায়ই ব্যস্ত থাকতেন। আমি আমার মত করে হামাগুড়ি দিয়ে চলতাম ইচ্ছেমত। একবার হল কি, মা কাজে খুব ব্যস্ত। আমি আপন মনে চলে গেলাম আঙিনার প্রান্তদেশে। ওখানে দাদীর কয়েকটি ছাগমাতা পোষ্য ছিল। ভারারের কোনেই তাদের বাস। পোষ্যরা ম্যা ম্যা,,,,,,,,,,, করে ডাকত আর নিপুণ কারিগরের মত পশ্চাদদেশ থেকে বড়ি গুলো ছেড়ে দিত। অবাক নয়নে আমি লম্বাটে গোল বড়ি গুলোকে দেখতাম। আর বাম হাত দিয়ে মুখে পুড়ে খেতে থাকতাম। জানিনা কত ছাগের বিষ্ঠা আজও আমার পাকস্থলিতে জমে আছে! যা হোক মা আংগুল দিয়ে আমার খাবার গুলো মুখ থেকে বের করতেন। মনে হয় সেটা আমার ভালো লাগতনা মোটেই। সেই সংসারের কাজের প্রধান মহিলা আমার মা আজও বেঁচে আছেন। মাঝে মাঝে ছাগ বিষ্ঠা ভক্ষণ প্রসঙ্গে বলেন। আমি অবাক হই। তবে সেদিনের কাজের উদ্দমী মানুষটা আজও কাজ করতে চায়। ছাগ বিষ্ঠা ভক্ষণ করা ছেলেটা তা মোটেই চায় না। আকাশ তোর রং কিরে বল? আকাশ উত্তর দেয়না। উন্মুক্ত উঠানে আকাশের নীলের দিকে তাকিয়ে আব্বা প্রশ্ন করে আর চোখের পলক ফেলে বারবার। তাঁর দেখা হয়নি কিছুই,-------- বাবা ছিলেন অন্ধ। সংসারে আমাদের মূল্য কম কেননা বাবা ছিলেন কম দৃষ্টি সম্পন্ন বলা চলে অন্ধ। সুন্দর আকাশ, দিগন্তে মাঠ, রূপালী নদী কিছুই দেখা হয়নি তাঁর। শুধু মনের গহীনে দেখেছিলেন ছেলেরা একদিন বড় হবে সব দু:খ ঘুঁচে যাবে সুদিন আসবেই। পরিবারের আয় নেই, আমি এবং আমার ভাইয়ের জন্মের পরপরই আলাদা সংসারে জীবন শুরু। জমিজমার ধান আর কিছু মৌসুমী ফসল ছিল চলার মতো সম্বল। বছরের ঈদগুলো পানসে হয়ে থাকত বরাবরই। কখনো দেখিনি পোলাও মাংসের জোগাড়। সকালে পান্তা ভাত আর বিঁচি কলাই ছিল প্রথম পছন্দের খাবার। একটা নির্জন গ্রামের অনগ্রসর পল্লীতে বেড়ে ওঠা। যেখানে রাস্তা নেই, বিদ্যুৎ নেই, গ্রামের সবাই সরল আর অশিক্ষিত। মা রান্না করতেন আর আমাকে অ আ ক খ পড়াতেন। উনানের পাশেই মাদূর পেতে পড়াতেন আর শুকঁনো গাছের পাতা পুড়ে রান্না করতেন। কোনদিন সাচি শাক কখনো কলার মোচা আবার কিছু জোগাড় না হলে খেশাড়ির ডাল। এটাই আমাদের রোজকার খাবার। স্কুলে ভর্তি হলাম। বেতন ও পরীক্ষার ফির সময় দাঁড়াতে হতো। ক্লাসের সবাই যথা সময়ে টাকা দিলেও আমি কবে দিব তা জানা নেই। বলতাম আব্বা আসবেন। একটা লজ্জা হীনমন্যতা কাজ করত সর্বদা। পরীক্ষার দিন দেখতাম আব্বা স্কুলের বারান্দায় ছোট ছোট পায়ে হাঁটছেন। আমি ক্লাস থেকে বের হয়ে আব্বার হাত ধরে হেড স্যারের রুমে নিয়ে যেতাম। ভাবতাম আব্বা মনে হয় টাকা দিবেন। কিন্তু আব্বা স্যারকে বলতেন মামা, - পোলাডার পরীক্ষা নেন কয়দিন পর টাহা দিমুনে। অনাটন আমাকে দমাতে পারেনি। মেধা আর প্রতিভার স্বাক্ষর সব সময়ই রেখেছি। বরাবরই ক্লাসে ফার্স অথবা সেকেন্ড হতাম। আরো বড় হলাম। এস এস সি পরীক্ষা নীকটবর্তী হলো। মামার থেকে চাল, খালার থেকে বিছানা, প্রতিবেশীর থেকে ধার করা টাকা দিয়েই পরীক্ষা শেষ হলো। তিনমাস পরে দু'বিষয়ে লেটার মার্কস সহ প্রথম বিভাগ। বস্তুত,অঙ্কে ৮৮ নম্বর পেয়েছিলাম। শুরু হলো আমার নতুন পথের যাত্রা। এইচ এস সির পথটা যে কতটা কষ্টের ছিল তা প্রকাশ করা অসাধ্য। যে বাড়িতে প্রাইভেট পড়াতাম সে বাড়ীর কর্তার থেকে ধার করে ফরম ফিলাপ করেছিলাম। কিন্তু টাকা শোধ দেওয়া আজও হয়নি। যখন দেয়া যেত তখন সামর্থ্য ছিলনা। যখন সময় হলো তখন তিনি বেঁচে নেই। তাঁর উত্তরসূরীরা টাকাটা নিতে বলায় কি পরিমান লজ্জা পান বলাবাহূল্য। তবে তাঁদের আদর ভালোবাসায় আমি সিক্ত। ঢাকায় পাড়ি জমালাম। ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দেবার সাহস শক্তি কিছুই ছিলনা। কারণ যেখানে গ্রামের স্কুলের টাকা যোগাড় করাই কষ্ট সাধ্য সেখানে আবার ভার্সিটিতে পড়া। বাধ্য হয়েই কলেজে ভর্তি হলাম। টিউশনি করে নিজে চলতাম আর পারলে মাঝে মাঝে আব্বাকে কিছু পাঠাতাম। আমার আরো তিনটা বোন আছে। তাদের নিয়ে তো অন্ধকার দেখছিলাম সবাই। কিন্তু ভাগ্য আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছিল তাই সব ভাই বোনই আজ উচ্চ শিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত আমরা। অনার্স সহ এম এ পাশটা করলাম ঢাকা কলেজ থেকে টেনেটুনে। মামু খালু নেই তাই বি সি এস দিয়েও হেরেছি। সরকারি হাইস্বুলের সহকারী শিক্ষকের ভাইবা, অর্থ মন্ত্রনালয়ের ভাইবা, এমনকি প্রাইমারীর ভাইবা দিয়েও চাকুরী জোটেনি। অবশেষে কি মনে করে একটি বেসরকারি ব্যাংক অফিসার পদে চাকুরী দিল জানিনা। আমার মতো সব ভাইবায় অযোগ্য ছেলেকে এতবড় প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক কি করে যোগ্য মনে করেছে তা মাথায় ধরেনা। এবার একটু একটু করে জীবনের পথে হাঁটতে শুরু করলাম। ছোট ভাই বোন গুলোকে পড়াতে থাকলাম। বোন দুটোকে ভালো পরিবারে বিয়ে দিলাম। একজন এখনো ভার্সিটিতে পড়ছে। পালে লাগা দক্ষিণা বাতাশের মতো মাত্র সূখের হাওয়া পরিবারে বইতে শুরু করেছে। আমি চাকুরি করছি আর ভাইটা বিদেশে কাজ করে। এর মধ্যেই কোথাথেকে নাক মোটা একটা মেয়ে জীবনের সাথে জড়িয়ে গেল। বড় ভালোবেসে ফেললাম। সে এক দীর্ঘ ইতিহাস। সে ধনী বব্যবসায়ীর একমাত্র কন্যা। জাত ঢাকার স্থানীয় মানুষ। একটা সিনেমেটিক বিষয় হয়ে গেল, গরীবের ছেলের সাথে ধনীর মেয়ের প্রেম। অনেক ঝামেলা অনেক বাধা কিন্তু মোটা নাকের মেয়েটা পিছপা হয়নি। অবশেষে উভয় পরিবারের সম্মতিতে মহা ধূমধামে ঢাকার উত্তরায় আমাদের বিয়ে। প্রায় আড়াই হাজার মানুষের বিশাল আয়োজন। সত্য কথা বলতে আমার জীবনে আড়াইশ মানুষের কোনো অনুষ্ঠানই আমি দেখিনি------!!!! বিয়েটা ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারী। বিয়ে করেই নববঁধূকে নিয়ে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে পটুয়াখালীর গ্রামের পথে যাত্রা। মহা ধূমধাম। নববঁধূকে নিয়ে গ্রামে কি পরিমান বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম তা বলে শেষ করা যাবেনা। বস্তুত, সে চার তলা থেকে নিচতলায় কখনো থাকেনি, কোনোদিন ঢাকার বাইরে যায়নি আর কোনো গ্রামও দেখেনি। গরীবখানা, কাঁচা ঘর, কাঁচা টয়লেট সবকিছু তার কাছে আজব মনে হয়। কিন্তু তার ভালোবাসার কারণে সবকিছুই সহজ হয়েছিল সেদিন। সেজন্য অজরা নূরের কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞতা। সংসারে এখন অনেক সূখ। নতুন ঘর হয়েছে যা এলাকার সেরাই বলা চলে। উচ্চ শিক্ষিত পদস্থ অফিসার মেয়ের জামাই। বড় ছেলে চাকুরে, মেঝ ছেলে প্রবাসে আয় করে। সব চলছিল ঠিকঠাক এই সংসারে। নিরক্ষর মা আর অন্ধ বাবার মুখে আনন্দের শেষ নেই। কিন্তু ভাগ্য এবার অন্য কিছু নিয়ে অপেক্ষা করছে। ২০১৩ আগস্ট মাসে রোজার ঈদ ছিল, শুক্রবার। নতুন বউয়ের প্রথম গ্রামে ঈদ। সাথে মেয়ে জামাইও এসেছে। প্রবাসী ছেলেও দেশে। এত আনন্দ এই পরিবার জীবনে কখনো দেখেনি। ঈদের পরের দিন আব্বা আমার স্ত্রী অর্থাৎ অজরা নূরকে বললেন,-;- মা আমি হাটে যাবো তুমি কি খাবে বল? অজরা কিছু খবনা বলে পরে পেয়ারা আনেন বলেছিল। আব্বা রাস্তার পাশ ধরে চলতে পারতেন এটা তাঁর ছোটবেলা থেকে অভ্যাস। তাই বাজার নিজে করাটা তাঁর খুব আনন্দের ছিল। বাজারে যাবে কিছু সওদা আনবে আর বউয়ের জন্য পেয়ারা। বাড়ি থেকে শুভ্র পাঞ্জাবি পরে মাথায় টুপি ও রুমাল দিয়ে রওয়ানা দিলেন। আমরা সবাই খোশ গল্পে মগ্ন। সময় বয়ে যায় নতুন বউ এবং আমরা দুপুরে খাবো তাই আব্বার অপেক্ষা করছি। এ সময়ই প্রতিবেশী একটা ছেলে আমাকে বলল, আপনের আব্বায় রাস্তায় এক্সিডেন করচে---- আমি, ভাই এবং ভগ্নিপতি দৌঁড়ে গেলাম। দুপুরবেলা রাস্তায় কিছুনেই তাই যেতে একটু দেরী হলো। কিন্তু যে বাড়ীর সামনে এক্নিডেন্ট হয়েছে সে বাড়ির মানুষ কাঁদছে। দেখেই প্রাণ শুঁকিয়ে গেল। আব্বাকে নিয়ে বাজারে ডাক্তারখানা নিয়ে গেছে। তবুও মনে মনে ভরসা পেলাম, অটোরিক্সার চাপায় যাহোক মরবেনা। নিয়তি হয়ত তখন হাসছে। বাজারে গিয়ে দেখি আব্বার নিথর দেহটা একটা টুলের উপর শোয়ানো। হাত দিয়ে দেখলাম শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। বুকটা রক্তে ভেজা। চোখদুটো বন্ধ হচ্ছে না। বুঝতে আর বাকী নেই এই দু:খী স্বপ্ন দেখা মানুষটা আর ফিরে আসবেনা কোনদিন। বোনেরা কান্না জুড়ে দিল। অজরা নতুন বউ তবুও গ্রামের কাঁদা মাখা ফসলের ক্ষেত পেরিয়ে রাস্তায় এসে আব্বার পায়ের উপর লুটিয়ে কান্না জুড়ে দিল। মনে হয় এই ক্ষত কোনোদিন ওর হৃদয় থেকে মুছে যাবেনা। প্রকৃতি বড় অসহায়। একটা স্বপ্ন দেখা মানুষ কিছুটা স্বপ্নের পথে এগিয়ে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সবার কাছে আব্বার রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া প্রার্থনা করছি আপনাদের ভালোবাসার অভি বরিশাল। ১০.০১.২০১৭ইং

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন