নতুন দেশ পত্রিকায় মিস নাসরিন শাপলার “জাহরানের মৃত্যু এবং কিছু ভাবনা” শিরোনামের লেখার উপর আমার কিছু সংযোজন। আমি নিশ্চিত যে মিস নাসরিন কাউকে ছোট করার জন্য লেখাটি লিখেন নি। লেখাটির অনেক কিছু যে দরকারি সেটাও যেমন সত্য তেমনি লেখাটি আবার কারো কাছে আপত্তিকরও হতে পারে, যে যেভাবে নেন। after all আমরাতো human being . যাহোক, তারপরেও ধন্যবাদ মিস নাসরিনকে কারণ লেখাটি পড়ে আমার মনে হয়েছে আমিও কিছু লিখি। শুধু হাসপাতাল কেনো আপনি কোর্টে গেলেও একটু হোমওয়ার্ক করে যাওয়া ভালো, কিন্তু অনেক সময় সেই সময়টা নাও থাকতে পারে। যাহোক এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করবো না কারণ আমি পুরা ঘটনাটা জানি না। আমরা আবেগে বলি, অথবা সত্যি সত্যিই তারা অবহেলা করছে কি না, সেটির জন্য অবশই ইনভেস্টিগেশন হওয়া দরকার। কিন্তু ফর্মাল অভিযোগ না হলে ইনভেস্টিগেশনটা তো হবে না।
 
আমি বিগত ২/৩ বছরে কয়েকটি অনাখাঙ্খিত মৃত্যুতে আমাদের কমিউনিটিতে FBএ বা অন্য লোকাল মিডিয়াতে অনেক হৈচৈ শুনেছি, এই করো সেই করো, এটা করা উচিত, সেটা করা উচিত ইত্যাদি , কিন্তু বেশ কিছুদিন পরে আর বেশি খবর থাকে না, এবং এই সব ক্ষেত্রে আসল যে জিনিসটি করা দরকার সেটা সাধারণত করা হয় না। হয়তো কেউ করেন তবে আমার জানা নেই। যেটা হলো হাসপাতালের বা স্টাফদের অবহেলার বিরুদ্ধে যথাযোক্ত গভর্নিং বডিকে লিখিত কমপ্লেইন। এখানে আমাদের দেশের মতো ঠিক না, অনেক অনেক ক্ষত্রে জবাদিহিতা আছে এবং আমি ডাক্তার, পুলিশ, গণ মাধ্যম কর্মকর্তা বা আমলাদের চাকরীচুত্য এবং সাজা হওয়া দেখেছি। আমাদের কোনো সন্দেহ থাকলে যথাযত জায়গায় ফর্মাল কমপ্লেইন করা উচিত, আপনাকে অবহেলার জবাদিহিতা তো পাবেনই, অন্যদেরও উপকারে আসবে।
 
কিছু না হলেও, আপনার যদি একই ফর্মাল কমপ্লেইন থাকে, তাহলে একটি রেকর্ড থেকে যায়।
আমি আমাদের কাজে দেখেছি যদি কোনো ক্লায়েন্টের স্টাফ বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে তার কেসটি সবাই একটু সাবধানে দেখে, এটা যেন একটা অলিখিত সতর্কতা। এই অভযোগগুলি ভিত্ত্বিহীন হলেও এদের কেস একটু সতর্কতার সাথে দেখা হয়। আমি এই বেপারে আগে লিখেছি এবং ২/১ জনকে কে অভিযোগের প্রক্রিয়া সম্বন্ধেও বলেছি কিন্তু উনারা আর আগাননি। অভিযোগের পর তারা দেখেব কর্তব্যরত ডাক্তার বা অন্য স্টাফ তাদের ধার্য করা কাজ ঠিকমতো ফল করেছেন কি না, যদি না করে থেকেন তাদেরকে জবাদিহি করতে হবে এবং তাদের অবহেলা প্রমান হলে তাকে তার ফল ভোগ করতে হবে। আর যদি সেটা ফলো করে থাকেন তাহলে পলিসির প্রশ্ন আসবে। যদি পলিসির কারণে বিপদ ঘটে থাকে তাহলে সেটি ল-মেকারদেরকে জানাতে হবে।
 
৫/৬ বছর আগে আমার একটি বড়ো সার্জারি হয়েছিল সেন্ট জোসেফ হাসপাতালে। আমি হাসপাতালের প্রতিটি স্টাফের কাছ থেকে বর্ণনাতীত সেবা পেয়েছি। বরং অনেক সময় অতিরিক্ত পেইনের কারণে স্টাফদেরকে অনেক জ্বালিয়েছি, কিন্তু উনারা খুব ধৈর্যের সাথে সেটির মোকাবেলা করেছেন।
এখন সেই হাসপাতালেই একবার আমার এক ক্লায়েন্ট আধ ঘন্টার বিড়ি খাওয়ার পাশ নিয়ে আর ফিরে আসে নি। আমি তাকে ফর্ম ২ তে এডমিশন করার সময় স্টাফদেরকে বলে এসেছিলাম যে তার ডিসচার্জ এর আগে আমার সাথে যোগাযোগ না করে যেন তাকে না ছাড়ে কারণ সে বাসা চিনতে পারবে না এবং হারিয়ে যেতে পারে বা গাড়ি চাপাও পড়তে পারে।
 
যাহোক আমি যখন ফোন করে তার কথা জানতে চাইলাম তখন নার্সিং স্টেশন থেকে বললো ওই নামের কেউ নেই। আমি বললাম আমি নিজে তাকে দেখে এসেছি। যাহোক আমি হেড নার্স বা নার্স ইন চার্জ কে চাইলাম। তার সাথে কথা বললাম। সে খুঁজে বললো, সে ছিল ঠিকই কিন্তু সে পাস্ নিয়ে আর ফিরে আসে নি তাই তারা তাকে ডিসচার্জ করে দিয়েছে কারণ যারা ভলান্টারি এডমিশন নেয় তারা একটা নিদৃষ্ট টাইমে ফিরে না আসলে অটোমেটিক ডিসচার্জ হয়ে যায়। আমি বললাম সে তো সার্টিফাইড, ভলান্টারী এডমিশন না। সে বললো তার রাউন্ডে যেতে হবে, সময় নেই ডিসচার্জ রুগীর ফাইল খুঁজে দেখা।
 
আমার মাথা পুরা গরম। আমি নিজেকে ঠান্ডা করে বললাম তাদের কর্তব্যরত ডাক্তারের ফোন নাম্বার দিতে। সে দিলো। ডক্টরকে না পেয়ে মেসেজে রাখলাম। বললাম একটি সার্টিফাইড রুগীকে ভলান্টারী এডমিশনের রুগী বলে অটো ডিসচার্জ দিয়ে তারা ভুল করেছে, শুধু তাই নয় তারা আমাকেও জিনিসটি জানাই নি, যেটা কিনা ডাক্তারের নোট থাকার কথা।
যাহোক আমি বলেছিলাম তারা আমাকে তাদের যে ভুল বা অবহেলার যথাযত কারণ না বলতে পারলে আমাকে Hospital Patient Advocacy বা Patient Relation এবং Ontario College অফ Physician এর শরণাঅপর্ণ হতে হবে।
 
মেসেজে দেওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে ডাক্তার ভদ্রমহিলা আমাকে ফোন ব্যাক করেন এবং পুরা বিষয়টি শুনে তার ফাইল খুঁজে দেখেন এবং নিশ্চিত হন যে সেটি ভলান্টারি এডমিশন ছিল না। উনি বেশ পোলাইট ছিলেন। আমাকে বললেন আমি কি ক্লাইন্টকে বাসা থেকে হাসপাতালে আন্তে পারবো কি না। আমি বললাম সে বাসায় নেই, তাছাড়া বাসায় থাকলেও আমি তাকে খুঁজবো না কারণ সে সার্টিফাইড অতএব তারা পুলিশের মাধ্যমে ওই কাজটি করতে পারে। উনি তখন বললেন তাই করবেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে ফোন করে ২ ঘন্টার মধ্যে তাকে খুঁজে হাসপাতালে নিয়ে আনা হলো। উনি ক্ষমা চাইলেন স্টাফের ওই ভুলের জন্য এবং আমাকে বললেন উনি এটি উনাদের টিম মিটিঙে বলবেন যাতে করে এই ধরণের ভুল আর না হয়। তারা আমার ক্লায়েন্টের কাছেও ক্ষমা চেয়েছিলেন। যাহোক এর পর বাকি কয়দিন আমার ক্লায়েন্টের প্রতি ওদের অনেক নজর বেড়ে গেলো এবং ওই সুযোগে সে হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই ওর চোখের, দাঁতের, হাতের অন্য চিকিৎসাও করিয়ে নিলাম।
 
আমি কথাগুলি বললাম এই কারণে যে, কাজ হোক আর নাইবা হোক যদি কোনো ধরণের অবহেলা হয়ে থাকে তাহলে অবশই সে বিষয়ে ফর্মাল কমপ্লেইন করতে হবে। এবং ভুল বা অবহেলা মাঝে মধ্যে হয়, যা কি না আমরা মাঝে মধ্যেই শুনে থাকি। এই তো কয়েক মাস আগে এক নার্সের জেল হলো কারণ সে নার্সিং হোমের ৭/৮টি সিনিয়রদের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল। আমরা চুপ থাকলে বা ফাও চিল্লা চিল্লি করলে এগুলি বাড়বে বই কমবে না।
 
যার কোনো প্রিয়জন হারায় তার হয়তো ওই মুহূর্তে কমপ্লেইনটা করা কঠিন, তবে তার আসে পাশের মানুষদের তাকে এই বেপারে সহায়তা করা উচিৎ। যেহেতু জাহরানের মা একজন নার্সিংয়ের ছাত্রী সে এই বিষয়টি ভালো করে জানবেন, তথাপি আমি জাহরানের বাবা মা বা আত্মীয়দের উদেশ্য করে বলছি, আপনাদের যদি এই বেপারে কোনো পরামর্শ দরকার হয় আমি বেক্তিগত ভাবে আমার সামর্থের বেস্ট দিয়ে আপনাদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা করবো। এই ধরনের লসের জন্য শান্তনা দেওয়ার মতো কোনো ভাষা নেই এবং মনে হয় কোনোদিন পৃথিবীতে এই শান্তনার কোনো ভাষা তৈরীও হবে না । যেটা করতে পারি তা হলো তার আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং তার রেখে যাওয়া পরিবার যাতে এই লসকে সহ্য করতে পারেন সেই দোআ করতে পারি, আসুন আমরা সেই দোয়াই করি।
আর হা BCCB Health Care Awareness এর একটি বিষয় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুনেছি। এই বিষয়গুলির উপর awarnessও সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হতে পারে।
 
সবাই ভালো থাকবেন।
 
বি. মুকুল
 
http://notundesh.com/news/15acba55d5b3b2

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন