একটা শিশুর জন্মের পর থেকেই মায়েরা যে বিষয়টি নিয়ে অতি মাত্রায় চিন্তিত থাকেন তা হচ্ছে শিশুর খাবার । আমাদের দক্ষিন এশিয়ার বেশির ভাগ মায়েরই একটা কমপ্লেইন থাকে তা হচ্ছে বাচ্চা খায় না। কিন্তু বাচ্চাদের সাথে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি আমরা মায়েরাই বোধ হয় বাচ্চাদের এই না খাওয়ার পিছনে অনেক ভুমিকা রাখি।

লেখার চেষ্টা করছি কানাডার Childcare centre গুলোর খাবার বাবস্থা এবং Parenting and Literacy Centre এর খাবার বাবস্থা নিয়ে।

এখানে প্রতিটি চাইল্ডকেয়ার সেন্টারে সারা দিনে নির্দিষ্ট সময়ে (সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত) ৩/৪ বার ( দুপুরের খাবারসহ ) খাবার দেয়া হয়ে থাকে। খাবারের মেন্যু Day care Act , 2014 ( Section 42 of Ontario Regulation 137/15) অনুযায়ী Canadian Food guide অনুসারে করা হয় যেন শিশুরা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে শিখে। কানাডার ফুড গাইডটি চার শ্রেণীর খাবার দিয়ে তৈরিঃ

তাতে প্রথমে আছে শাক সবজি ও ফলমূল জাতীয় খাবার, শস্য জাতীয় খাবার ( ব্রেড, নুডুলস , ভাত, পাস্তা, রুটি ) , দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার আর প্রোটিন জাতীয় খাবার ( মাছ বা মাংস ) । বাচ্চাদের বয়স অনুযায়ী খাবার গুলো তৈরি করা হয়। কোন কোন সেন্টারে নিজেদের সার্টিফিকেট ধারী Food Handler দিয়ে খাবার গুলো প্রস্তুত করা হয়। আবার কোন কোন সেন্টারে বিভিন্ন Food Supply Service থেকে খাবার সরবরাহ করে থাকে। দুপুরের খাবার এই চার শ্রেণীর খাবার থেকে নির্বাচন করা হয়।

সেন্টার গুলোতে বাচ্চাদের কে চেয়ার টেবিলে ( তাদের উচ্চতা অনুযায়ী) একসাথে বসিয়ে খাবার পরিবেশন করা হয় এবং তাদের কে নিজ হাতে খাবার খেতে উৎসাহিত করা হয়।৬/৭ মাসের ছোট্ট বাচ্চাদেরকে ও High chair এ বসিয়ে খাবার খাওয়ানো হয়। Finger food যেমন বিস্কুট, সিরিয়াল, ছোট করে কাটা গাজর বা আপেলের টুকরো ছড়িয়ে দেয়া হয় যাতে বাচ্চারা খুটে খেতে শিখে। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করি সত্যি সত্যি বাচ্চারা এভাবে নিজের খাবার নিজে খেতে শিখে। আমরা বাঙালি মায়েরা হয়ত খুব কষ্ট পাব আহারে বাচ্চাটা একা একা খাওয়ার চেষ্টা করছে। কোন বাচ্চাকে জোড় পূর্বক খাওয়ানো দণ্ডনীয় অপরাধের মধ্যে পরে। এখানে Day care Act এ বাচ্চাদের পছন্দ অপছন্দ কে সম্মান দেয়ার কথা উল্লেখ আছে। বাচ্চাদের কে খাবার পরিবাশনের সময় শিক্ষককে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হয় কোন বাচ্চার কোন খাবারে অ্যালার্জি আছে কিনা? কানাডায় প্রায় 2.5 মিলিয়ন মানুষ কোন না কোন খাবার থেকে অ্যালার্জি তে ভুগছে। আর ৩ বছরের শিশুদের মধ্যে প্রায় ৬ থেকে ৮% শিশু অ্যালার্জিতে আক্রান্ত।

Parenting and Literacy Centre এর system কিছু টা ভিন্ন। কারন সেখানে অভিভাবকসহ বাচ্চারা থাকে। তাই সকাল ৯ টার মধ্যেই বিভিন্ন রকম ফল ছোট ছোট করে কাটা, ক্রাকারস , চীজ , দই বা দুধ দিয়ে টেবিল সাজানো থাকে। অভিভাবকরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী খাবার প্লেটে তুলে নিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ান। এই সেন্টারে ও বাচ্চারা যেন নিজ হাতে খেতে শেখে তার জন্যই এভাবে দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার মায়েরা বাচ্চাদের কে পিছনে ঘুরে ঘুরে খাওয়াতেই বেশী পছন্দ করেন। এসব বাচ্চা্রা ও মনে করে খাবারটা তার না , মা বা বাবারই দায়িত্ব তাকে খাওয়ানো। এই সেন্টারে অভিভাবকদের সামাজিক রীতিকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়।

প্রতিটি শিশুই একেকজন সতন্ত্র মানুষ। শিশুদের কে যদি তার নিজের কাজগুলো প্রথমেই করে না দিয়ে উৎসাহ দেয়া হয় কাজটি করতে, তাহলে শিশুটির নিজের উপড়ে যেমন আত্মবিশ্বাস বাড়ে তেমনি সে নিজেকেও ভাবতে শিখে পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসাবে। হয়ত এই শিশুটিই কাঁধে তুলে নিবে আগামী দিনের নেতৃত্ব ।

(ছবি:-সৌজন্যে   medivoicebd ) 

 

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন