Related image

আগে বাংলাদেশী চ্যানেল না থাকায় তেমন বাংলাদেশী  চ্যানেল দেখা হতো না কিন্তু ইদানিং কিছুটা দেখা হয়, বিশেষ করে রাতে খাওয়ার সময়, মূলত উদ্দেশ্য খবর দেখা কারণ খবরও শোনা হয় আর সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছবি দেখা যায় যেটা আমার খুব ভালো লাগে। তবে সব সময় খেতে বসলে আর খবর থাকে না তাই দুই একটি অন্য অনুষ্ঠানও দেখা হয়। একটি বিষয় অনেক আগের থেকেই লক্ষ্য করেছি কিন্তু এই ভাষার মাসে ভাবলাম এ বিষয়ে কিছু লিখলে মানায় যদিও বিষয়টি সব সময় খেয়াল করার বিষয়।

আমাদের দেশ দীর্ঘদিন ইংরেজদের শাসনে থাকায় এবং ইংরেজি দ্বিতীয় ভাষার মতো ব্যাবহার হওয়াতে অনেক অনেক ইংরেজি শব্দ বাংলা ভাষায় ঢুকে পড়েছে এবং সেটা হতেই পারে কিন্তু সমস্যাটা হলো যখন কেউ কেউ  ইচ্ছা করে অপ্রয়জোনীয় ভাবে বিদেশী ভাষার শব্দ নিজের ভাষায় ঢুকিয়ে দেন এবং নিজেকে তথাকথিত স্মার্ট মনে করেন। আবার কেউ কেউ বাংলাটাকে ইচ্ছা করে যখন বিকৃত ভাবে উচ্চারণ করেন তখন আমাদের প্রিয় ভাষাটিকে জবাই করার শামিলই মনে হয়। আর সাথে সাথে এটাও মনে হয় যে আমাদের ভাষা শহীদদের তৎকালীন খানেরা যেমন খুন করেছে তেমনি এরাও আবার দ্বিতীয়বারের মতো খুন করছে।

সব থেকে পিড়াদায়ক বিষয় হলো যখন দেশের টিভি ( দূরদর্শন )  চ্যানেল গুলোর অনেক উপস্থাপক বা উপস্থাপিকা নিজেকে অতিমাত্রায় স্মার্ট করতে গিয়ে ভাষাটাকে বিকৃত করে ফেলেন, মনে হয় এরা হয়তো আমাশয় আক্রান্ত বা অন্য কোনো পেটের পিড়ায় আক্রান্ত। কি দরকার বাবা শব্দগুলি শুদ্ধভাবে না বলে এতো বেকা তেড়া বলার। আর যে শব্দটি বাংলায় সাবলীল ভাবে বলা যায় সেটির ব্যাবহার কেন ইংরেজিতে করা হবে। অনুষ্ঠানটি বাংলায় কারণ দর্শক শ্রোতা বাংলা ভাষাভাষী তাই সেখানে অপ্রয়জনীয় ইংরেজি শব্দ টানা টানির কি দরকার। আমি আমার পড়াশুনা, কাজ এবং ভ্রমণের কারণে অনেক দেশে গেছি এবং দু একটি দেশে বেশ কিছু দিনের জন্যও থেকেছি কিন্তু কোনো দেশে এই ধরণের ঝোক দেখি নাই। আমার মনে হয় প্রতিটি বাঙালিরই চাল ডালের খিচুড়ি বেগুন ভাজি, ইলিশ মাছ বা মুরগি ভুনা দিয়ে খেতে ভালো লাগে এবং সেটাই স্বাভাবিক কিন্তু বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই খিচুরিপানা কখনই শোভনীয় নয়।

হতে পারে কোনো একটি বিদেশী ভাষা আপনার খুব ভালো লাগে তাই আপনার সেটা বাংলার মধ্যে খিচুড়ি পাকাতে ভালো লাগে, তাই যদি হয় তাহলে চলে যান সেই ভাষার উপর পরিচালিত অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা বা অন্য কোনো কাজে কিন্তু দয়া করে বাংলা ভাষাকে বিকৃত বা অন্য কোনো কিছু দিয়ে খিচুড়ি পাকাবেন না। আরো একটি অপ্রীতিকর বিষয় সেটা হলো আমাদের দেশের কিছু কিছু লোকের কান্ড কারখানা দেখলে মনে হয় তাদেরকে জোর করে বাংলা বলানো হচ্ছে  , বরং তাদেরকে যদি শুধু ইংরেজি, আরবি বা হিন্দি বলতে দেওয়া হতো তাহলে মনে অনেক শান্তি পেতেন।
আপনি পারলে আপনার আঞ্চলিক ভাষা বলুন তাও ভালো কারণ সেটা আমাদের ঐতিহ্য। যাহোক আমি একা এই বিষয় নিয়ে বকর বকর করলে হয়তো খুব একটা কাজে আসবে না তবে আবারো মাদার তেরেসার সেই উঁক্তি, ” একা কিছু না পারলেও সমুদ্রে একটি ঢিল ছুড়তে পারি তাতে অন্তত অনেকগুলি ঢেউয়ের সৃষ্টি হবে ” . আসুন এই ভাষার মাসে সবাই এ ব্যাপারে একটু সচেতন এবং সোচ্চার হই যেখানে যখন সুযোগ হয় বেপারটি তুলে ধরি , আর বিশেষ ভাবে আমাদের সন্তানদেরকে যেন ব্যাপারটি সম্মন্ধে সচেতন করি; অন্তত যতটুকু পারি কারণ তারা তো এই দেশে থাকে। বাসার মধ্যে নিজেরা নিজেরা যদি বাংলা চর্চা না করি তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েরা কোথায় গিয়ে শিখবে। আমাদের CEO বলেন পৃথিবীতে যে যত ভাষা জানে সে ততো ধনী। কথাটি উনি প্রতীকী অর্থে বলেছেন তবে একটি অতিরিক্ত ভাষা আপনার দক্ষতাকে অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আমার নিজেরও অনেক সময় ভুল ভ্রান্তি হতে পারে কিন্তু সেটি কখনই ইসছাকৃত নয় এবং আমি আমার কিছু বন্ধু বান্ধব কে অসংখ ধন্যবাদ দেই যখন তারা এই বিষয়গুলিকে আমাকে জানিয়ে দেন।
অবশেষে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং এই আন্দোলনের সাথে জড়িত সকল  বেক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ করছি।
সবাই ভালো থাকবেন।

মুকলি
টরন্টো

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন