পড়াশুনা শেষ করেই আমরা বেশির ভাগ কানাডায় এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের  উচ্চতর ডিগ্রী আমাদের অনেকেরই আছে। তারপরও এখানে আসার পর আমরা কেউ কেউ আবার পড়াশুনা করি। বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের  উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে এখানে কলেজে ডিপ্লোমাতে ভর্তি হতে কারো কারো মধ্যে সংকোচ থাকে। আমার কানাডিয়ান সহপাঠী ও পরিচতদের দেখেছি নিসংকোচে এ কাজ করতে। কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী নিয়ে এসে কলেজে ডিপ্লোমা করছে।

বাংলাদেশে এক সময় নামের শেষে বি এ, বি এস সি ইত্যাদি লেখার চল ছিল। এখন তা তেমন একটা দেখা যায় না। যদিও ডক্টর, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার ইত্যাদি পেশাদারী পরিচয় নামের সাথে জুড়ে দেয়ার চল এখনও আছে। কানাডায় আমার বর্তমান কর্মস্থলে কাউকে কাউকে নামের শেষে তাঁর অর্জিত ডিগ্রি লিখতে দেখি। একজনকে তাঁর ইমেইলে নামের শেষে M.Ed Candidate লিখতে দেখেছি। প্রথম প্রথম বিষয়টা একটু অদ্ভুত মনে হত।

কানাডায় আসার পর একটি নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে গিয়েছিলাম। তখন ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে মাস্টার্স করছি। সেখানে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত একজন কানাডিয়ানের সাথে পরিচয় হলো। তিনি জানতে চাইলেন কী করছি। আমি বললাম মাস্টার্স করছি। তিনি জানতে চাইলেন কেন করছি। আমি বললাম, এখানে আমি আইনজীবী হতে চাই। বার পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য মাস্টার্স করছি। বাংলাদেশ থেকে মাস্টার্স করে এসেছি, এখন আবার করছি। তিনি বললেন আপনি জানেন (তৎকালীন) কানাডার প্রধান বিচারপতির আইন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী নাই [বর্তমান প্রধান বিচারপতিরও নাই]। আমি গুগল করে দেখলাম কথা সত্যি। আগ্রহ নিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর খোঁজ নিলাম। দেখি তাঁরও কোন মাস্টার্স ডিগ্রী নাই।

সহকর্মীদের নামের শেষে ডিগ্রী জুড়ে দেয়া দেখে একবার ভাবলাম আমিও শুরু করি। কিন্তু পরক্ষণে আমাদের জেনারেল ম্যানেজারের কথা মনে হলো। তাঁর নামের শেষে কোন ডিগ্রী নাই। কে জানে তিনি কতটুকু পড়াশুনা করেছেন। শুনেছি এখানে অনেকে অনেক বড় পদে আসীন কিন্তু তাঁদের উচ্চতর ডিগ্রী নাই। হয়তবা একটা ডিপ্লোমা করেই লেখাপড়ার পর্ব শেষ করেছেন।

একদিন আমার পাশেই দু’জন সহকর্মী কথা বলছিলেন। কথার বিষয় ছিল অধীনস্থ পদে কর্মী নিয়োগে কী যোগ্যতা চাওয়া হবে। মানবসম্পদ বিভাগের কো-অর্ডিনেটর বললেন, আপনি ওমুক ’ডিগ্রী’ যোগ্যতা হিসেবে ঠিক করেন। যার বিভাগে কর্মী নেয়া হবে তিনি তাতে রাজী হলেন না। কারণ, তাঁর নিজেরই সেই ’ডিগ্রী’ নাই।

বাংলাদেশ থেকে আমরা কষ্ট করে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেছি। এখানে চাকুরির আবেদন করার সময় তাই রেজুমে থেকে বাদ দিতে কারো কারো ইচ্ছে করে না। তবে কখনো কখনো চাকুরির ধরন ও পদ বুঝে শিক্ষাগত যোগ্যতা কমিয়ে লেখা প্রয়োজন হতে পারে। অনেকে এরকম পরামর্শ দিয়ে থাকেন। চাকুরির জন্য রেজুমেতে এই পরিবর্তনে নিশ্চয়ই কোন ক্ষতি নাই। চাকুরি প্রত্যাশীরা ভেবে দেখবেন।

(ছবি:- সৌজন্যে Seneca)


টরন্টো, কানাডা

জুলাই ৩০, ২০১৯

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন