স্কুলে সামার ভ্যাকেশন চললেও অফিস খোলা ।মেজো আর ছোট মেয়েকে ক্লাশ থ্রি আর কিন্টার গার্ডেনে ভর্তি করলেও বিপত্তি হলো বড় মেয়ের । যেহেতু জন্ম বছর শেষের ৮ দিন আগে তো সে ক্লাশ সিক্সে যাবে । বলে কি! এক ক্লাশ উপরে উঠে গেল । দেশে সে ক্লাশ ফাইভে পড়ত , বয়স দশ । কি আর করা , কিন্ত স্কুলটা বাসা থেকে বেশ দূর হাটলে । ভ্যালী পার্ক মিডিলস্কুল ।
আগেই বলেছি আমাদের গাইড কামদেশী ভাই সব সময় খোজ নিত লোক ভালো কিন্তু কথা না শুনালে কাজ পোক্ত হয় না  । বুদ্ধি ভালোই দিল , সে যা বলছে সারমর্ম হলো যত বড় আশা নিয়েই চাকুরী খুজেন ভাই কাজ হবে না ! তার চেয়ে সময়টাকে উপভোগ করেন , চলেন ঘুরে আসি যেখানে চান । আমরা আসার কয়েকদিনের মধ্যেই নায়েগ্রা ফলস আর ওয়াসেগা বিচ ঘুরে আসলাম । তখন মনে হয় আইন এতো কড়া ছিলনা , নইলে এক গাড়ীতে আমরা ৫ জন সহ ওনারা ৪ জন বসতাম ! আর কার সীট নাই বা বললাম ।

আমি প্রতিদিন বিকেলে নীচে যাই যদি কোন বাঙ্গালী পাই সে আশায় । কথা বলব কার সাথে! ছোট ছোট তামিল ছেলে মেয়েদের ইংরেজী বলা দেখে জীবন বৃথা মনে হতো ! বলা তো দূরে থাকুক বুঝতেও পারি না । ইতিমধ্যে আমার মেয়েরা ২/৩ জন তামিল বন্ধু বানালো । এর মধ্যে প্রথম একটা শব্দ শিখে আসল ” কুরুংগে” । দেখি এক বোন আরেক বোনকে বলে , পরে জানতে পারলাম এর অর্থ বানর ।
আমার আদার হাফ বহু আশা নিয়ে যেখানে সেখানে রেজুমি বানানো শিখতে যায় । এই রেজুমি ভালো না হলে নাকি চাকুরী হবে না । রেজুমি কত প্রকার আর কি কি আমিও জেনে গেছি তাকে দেখে । আর ১৫ বছরের প্রোগ্রামিং এর কোন মূল্যই নাকি নাই ! কি আর করবে আবার সেই ভাই বুদ্ধি দিল আপনি সেনেকা কলেজে ভর্তি হয়ে যান । যেই বলা সেই কাজ । প্রফেশনাল চাকুরী পেতে হবে !আর ভ্লান্টারী বাংগালী লোকেরা করবে!!! আমার মনে আছে আমাদের সাথে যারা দেশ থেকে পুরাদস্তর চাকুরী আর হাজব্যান্ডের ভাব নিয়ে এসছেন তাদের জন্য খুব মুশকিল হলো । । এরা না পারে সংসারে র কাজে হাত দিতে না পারে কোন সার্ভাইবাল জব করতে । ই গো তে লাগে ।

স্কুল খুলে গেল, আমিও ইংরেজী শিখতে বাচ্চাদের স্কুলের পাশে লিংক স্কুলে ভর্তি হলাম । সকালে বড় দু মেয়ে স্কুলে গেলে আমি ছোট মেয়ে কে নিয়ে যাই । আমার ক্লাশের সাথেই ডেকেয়ার ছিল , সেখানে সে এঞ্জয় করত । বিকেল শিফটে যখন ওকে স্কুলে দিতে যাই , ওই বিল্ডিং দেখলেই তার প্রাণপণ কান্না শুরু হয় । যত ই বোঝাই কাজ হয় না । সে বলে আমি ইংলিশ বলব না । আসলে বলতে বুঝতে পারত না বিধায় স্কুল এক ভীতির কারন হয়ে গেল । আমাকেও আশে পাশের অনেকে সাবধান করে দিল এমন অবস্থায় যেন মেজাজ না হারাই , নইলে বাচ্চা পুলিশে নিয়ে যাবে ।

আমি প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে ওর ক্লাশের ভিতর ভ্লান্টারি করার অনুমতি পেলাম কয়েক দিন । আমি খুব অসহায় বোধ করলাম । আমি আমার চার বছরের মেয়ের সাথেই আলাপ করলাম । জিজ্ঞেস করলাম তুমি ই বলো আমি যদি চাকুরী না করি কি হবে ! তোমার আব্বু ও স্টুডেন্ট । আমি জানি না ও কি বুঝলো । পরের দিন স্কুলের গেট থেকেই আমাকে বলে বাই আম্মু , আমি ভালো থাকব । তখন সেপ্টেম্বরের শেষ ।
আমার ইংরেজী শেখার স্কুলের পাশেই দেখি একটা McDonald, একদিন ক্লাশ শেষে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ওদের কোন লোক লাগবে কিনা ? ইংরেজী কিছু টা বলতে ও বুঝতে পারলেও অনেক সমস্যা তখনও ।আসলে ভুল হবার ভয় । আমি এপ্লিকেশন করার কয়েকদিনের ম ধ্যেই দেখি ইন্টারভিঊ ডাকল । তখন আরেক জ্বালায় পরলাম ,ইন্টারভিউতে যাই জিজ্ঞেস করে হিয়ারিং প্রব্লেম বলে ২য় বার জিজ্ঞেস করি । কিন্তু অবাক হলাম দুদিন পরে যখন্ এক জন আমাকে ওয়েলকাম জানিয়ে অফার দিল । শুরু হলো আমার সান্ধ্য জব আর দিনে বেবী সিটিং এর কাজ । আমি সেপ্টেম্বর থেকেই এক ইন্ডিয়ান বন্ধুর মাধ্যমে ২টা বাচ্চা রাখতাম । কয়েকদিনের মধ্যেই আমার বেবীর সংখ্যা ৬ এ দাড়ালো । প্রচন্ড ব্যস্ত আমি ঘর সংসার আর কাজ নিয়ে । কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে আমি আমার হাজব্যান্ডের আশা হত চেহারাটই দেখতাম সারাদিনের শেষে । আমিও কষ্ট পেতাম , প্রকাশ করতাম না , অপেক্ষা করতাম আরেকটি নতুন দিনের জন্য । ইতি মধ্যে আমার ক্লাশ সিক্সে যাওয়া বড় মেয়ে এক এক জিনিষ শিখে আসে আর প্রশ্ন করে । একদিন স্কুল থেকে এসে জিজ্ঞেস ক রে আম্মু তুমি কি জানো ক্রাশ অন কাকে বলে ??

চলবে-

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন