এই উইন্টারটা আমরা খুব কঠিন ভাবে পার করছি । সামারটা আসি আসি করেও আসছে না। এখনো সূর্যের দেখা ঠিক মত পাচ্ছি না। তাই বাগানের কাজও শুরু করতে পারছি না। প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে সারাদিন। এমন মন খারাপ করা আবহাওয়াও স্কুল অফিস কোন কিছুই থেমে থাকছে না। এমনই এক বিকেলে কাজ থেকে তার কিছুক্ষন আগেই তাসিনকে বেবিসিটারেরে বাসা থেকে নিয়ে বাসায় ফিরেছি। এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খুলতেই দেখি দুইটি হাস্যোজ্বল মুখ । আমাকে বলল হায় ! আমদের চিনতে পারছো? আমিও হেসে উত্তর করলাম হা চিনতে পারছি। ওদের দিকে  আমার হাতটা বাড়িয়ে দিলাম। বললাম কেমন আছো কেলি,  জিয়ানা?  আমি ওদের কে ভিতরে আসতে বললাম। ওরা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো ” তুমি আমাদের নাম মনে রেখেছো?”আমি বললাম ” কেন মনে থাকবে না? তোমাদের নাম মনে না রেখে কি উপায় আছে? ” সেদিন ছিল ২৭ শে ফেব্রুয়ারি । আমাদের এখানে প্রায় ২৫ ইঞ্চি স্নো পড়েছিল। আমার হাসবেন্ড ছিল বাংলাদেশে।কাজ থেকে বাড়ী ফিরে আমার গাড়ী রাস্তায় রেখেছিলাম। পার্কিং এ ঐ পরিমান স্নো ঢেলে ভিতরে  আসতে পারছিলাম না। তাই  ঘরে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বাচ্চাদের কে একটু সামাল দিয়ে শাবল হাতে বের হলাম পার্কিং লটের স্নো পরিষ্কার করতে। আমার পার্কিং লটটা বড় থাকায় মনে মনে ভাবছিলাম ইস আল্লাহ্‌ পাক কাউকে যদি পাঠাতেন আমাকে সাহায্য করতে! এত স্নো আমি কি করে একা একা পরিষ্কার করবো! এই রকম সাত পাঁচ ভাবছি আর শাবল দিয়ে স্নো পরিষ্কার করছি। এমন সময় দেখি একটা কাল গাড়ী যাচ্ছে? গাড়ীটি একটু সামনে এগিয়ে থেমে গেল। গাড়ী থেকে একটা মেয়ে বের হচ্ছে। আমি ভাবলাম হয়ত পাশের বাসায় যাবে। আমাকে অবাক করে দিয়ে ও আমার কাছে এসে বলল ” আমরা কি তোমাকে হেল্প করতে পারি?” আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললাম ” হা করতে পার। কিন্তু তার বিনিময়ে তোমাদের কিভাবে পে করতে হবে? ” মেয়েটি বলল ” না না তোমাকে কিছু পে করতে হবে না। গাড়ীতে আমার আরেকজন বন্ধু আছে। আমরা দুজন তোমাকে সাহায্য করবো । তোমার কি আরও শাবল আছে?” আমি বললাম ” না আমার আর শাবল নেই। ” মেয়েটি বলল ” ঠিক আছে আমরা তোমার প্রতিবেশির কাছ থেকে শাবল ধার করে আনছি ।” আমি কিছু বলার আগেই দেখি ও ওর গাড়ীর কাছে এগিয়ে যাচ্ছে । আর গাড়ী থেকে আরেকটি মেয়ে নেমে এসেছে। দুই জন কথা বলে আমার দুই ঘর পরের প্রতিবেশির দরজায় কড়া নাড়ছে। তারপর ওরা দুইটি শাবল এনে আমার সঙ্গে স্নো পরিস্কার করছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না -৩০ডিগ্রি টেম্পারেচারে ওরা কেন আমাকে এতটা সাহায্য করছে।  কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমি ওদের নাম জিজ্ঞেস করেছিলাম। কি করে কোথায় থাকে জিজ্ঞেস করছিলাম। ওরা ওদের নাম বলে বলল ” আমরা এসেছি আমেরিকা থেকে ভলেন্টারী ওয়ার্ক করতে। আমরা ১৮ মাস কাজ করে আমাদের ইউনিভার্সিটির পড়াশুনায় আবার ফিরে যাবো।” কাজ শেষে আমি যখন কফি অফার করলাম ওরা কিছুতেই ভিতরে আসতে চাচ্ছিলো না।  আমি চিন্তা করছিলাম ওদের এই সাহায্যের প্রতিদান আমি কি করে দিব। মনে হচ্ছিল স্বয়ং আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন ওদেরকে পাঠিয়েছেন আমাকে সাহায্য করার জন্য। তাই তো ওদের নাম আমি ভুলিনি , চেহারাও ভুলিনি। ওরা যে আমার পরম আত্মীয়।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন