এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। এগিয়ে যাচ্ছে সামাজিক কাঠামো। পরিবর্তন হচ্ছে আমাদের পারিবারিক ধ্যান ধারণা। আর সংঙ্গত কারণেই সেই পরিবর্তনের ঝাপ্টা এসে লেগেছে আমাদের কানাডায় টরেন্টো বাংলাদেশী কমিউনিটিতে। স্বামীদের পাশা পাশি স্ত্রীরাও এখন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, কখনোবা কোনো সারভাইভাল জবে, কখনো বা প্রফেশনাল জবে। সংসারের আয় বাড়ছে, চাহিদা বাড়ছে। আবাসস্থল ভাড়াকরা কোনো বেজমেন্ট বা ছোট্ট এপার্টমেন্ট বিল্ডিং থেকে স্থানান্তরিত হচ্ছে নিজেদের কেনা বাসা/বাড়ী। ছেলে/মেয়েরা লেখা পড়া শেষে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্নরকমের প্রফেশনে। বাংলাদেশী কমিউনিটিতে এই উন্নয়নের ছোঁয়া যেন আরো বেশীকরে ছড়িয়ে পড়ে তার জন্য আমাদের মধ্যে অনেক বাংলাদেশই ভাই অফিসিয়ালি বা আনঅফিশিয়ালি অকালন্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমাদের এই এগিয়ে যাওয়া যেন আরো বেগবান হয় তাই আমার এই লেখা একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা মাত্র।

আমরা নিজেদেরকে যতই প্রগতিশীল বলে দাবি করিনা কেন, বাস্তবতা হচ্ছে আমরা যারা ইমিগ্রান্ট হিসাবে প্রবাসে বসবাস শুরু করেছি , অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা হয় তা হলো আমরা ছেলেরা ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার করে প্রচন্ড ব্যাস্ত হয়ে পড়ি। আমাদের স্ত্রীরা /ভাবীর/আপারা আমাদের তুলনায় কিছুটা পিছনে পরে থাকেন। খানিকটা দেশের মতো এখানেও মহিলাদের সংসারের হাল ধরতে হয় কিন্তু পার্থক্য হলো, দেশে সংসারের কাজে সাহায্য করার মানুষ থাকতো, এখানেতো সে সুযোগ নেই। একসময় হয়তো স্বামীর মোটামুটি ধরণের ক্যারিয়ার প্রথিষ্ঠিত হয়ে যায়। কিন্তু মহিলাদের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবার সময় কোথায় ? আর তাই, ক্যারিয়ার এর পিছনে ছুটাছুটি না করে মহিলাদের একটি বড় অংশ কাস্টমার সার্ভিস জাতীয় চাকুরীতে ঢুকে পড়েন। এ ধরণের চাকুরিও ম্যানেজ করা যে খুব সহজ তাও বলা যাবেনা তবুও একে /ওকে ধরে হয়তো হটাৎ এধরণের চাকুরী একটা যোগান হয় তবে এ থেকে আর সহজে বের হয়ে স্বামীর মতো নিজের প্রফেশনাল ক্যারিয়ার নির্মাণ আর হয়ে ওঠেনা।

দেশ থেকে প্রবাসে আসা মহিলারা ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাগত ও কর্ম অভিজ্ঞতা নিয়ে এখানে এসেছেন। একেকজনের একেক রকমের। কেউবা আসেন জাস্ট মাঝারি ধরণের যেমন এসএসসি, এইচ এস সি, বি এ , বিএসসি ধরণের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে যাদের অনেকেরই দেশে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা হয়তো ছিল না। আবার অনেক মহিলারা আসেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী , বাংলাদেশে দেশীয় বা আন্তজার্তিক মানের মাঝারি থেকে উচ্চ পদে চাকুরী করেছেন অথবা স্কুল /কলেজ /বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসাবে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন অথবা সরকারি পর্যায়ে কোনো বিশেষ পজিশনে কাজ করেছেন কিন্তু এখানে এসে ঠিক বুঝে উঠতে পাচ্ছেন না কথা থেকে শুরু করা যায়। এসব সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমি চেষ্টা করবো প্রবাসে আমাদের দেশের মহিলাদের ক্যারিয়ার নিয়ে একজন প্রাক্তন সেটেলমেন্ট কর্মী হিসাবে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বিস্তারিত আলোচনা এ লেখায় তুলে ধরতে. তাই ধারাবাহিক লেখা শুরু করলাম.যদি কারো উপকারে আসে।

এখানে হিউম্যান রিসোর্স বা আডমিন্সট্রেশনে সত্যকথা বলতে কি, মহিলারা অনেক বেশী ইনভল্ভড হলেও কমিউনিকেশন স্কিল বা শ্রেণীবৈষম্য যাই বলিনা কেন আমাদের দেশীয় মহিলাদেরকে এখন পর্যন্ত এ সেক্টরে তেমন সফল হতে দেখিনি। তাই বলে আমি একেবারে হাল ছাড়তে বলবোনা। আপনি যদি কনফিডেন্ট মনে করেন আপনিও এ সেক্টরে ক্যারিয়ার ভাবতে পারেন। তবে, দেশের মতো এখানেও আমাদের দেশের মহিলারা কাজ করতে পারেন সার্ভিস সেক্টরে, তবে এখানকার সার্ভিস সেক্টরের ব্যাপকতা অনেক বেশি।

সার্ভাইবাল ধরণের জবকেও আমি ক্যারিয়ারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছি কারন আমি দেখেছি অনেকে এখানে এধরণের জব করেও ক্যারিয়ারে সফল হয়েছেন। আমি দেখেছি এখানে কিছু আমাদের দেশীয় মহিলারা টিমহর্টন-এ ক্যাশিয়ারের জব করে স্টোর ম্যানেজার এমনকি ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার পর্যন্ত হয়েছেন। যাহোক কথা হচ্ছে, কাজ কখনো ছোট / বড় নয় . যে কোনো কাজই আমরা যদি সততার সাথে সিরিয়াসলি করি, অবস্যই আমাদের ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে।

যেসব ক্ষেত্রে আমাদের দেশের মহিলারা এখানে ক্যারিয়ারে সফলতা পেয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও ক্যারিয়ারের স্বপ্ন দেখছেন তা নির্দিষ্ট ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম:
১. কাস্টমার সার্ভিস
২. ডে কেয়ার/ আর্লি চাইল্ডহুড এডুকেটর
৩. একাউন্টেন্ট
৪. পি এস ডব্লিউ / নার্স
৫. ল্যাব টেকনিশিয়ান
৫. স্যাটেলমেন্ট কর্মী/ সোশ্যাল ওয়ার্কার
৬. জব ডেভলোপার / এমপ্লয়মেন্ট এস্পেশালিষ্ট / এমপ্লয়মেন্ট কাউন্সিলর
৭. কমিউনিটি ওয়ার্কার
৮. মেন্টাল হেলথ কর্মী / সেল্টার কর্মী
৯. স্কুল বোর্ড
১০. রিয়্যাল এস্টেট
ইত্যাদি ইত্যাদি

আমার এই ধারাবিহিক লেখায় আমি উপরের উল্লেক্ষিত প্রতিটি বিষয়ে আলাদা আলাদা ভাবে
পরবর্তী লেখাগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আগামী পর্বের আকর্ষণ: ভাবীদের জন্য প্রবাসে ক্যারিয়ার ২ : কাস্টমার সার্ভিস জব

(ছবি:-সৌজন্যে Siasat)

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাঘ মাসের গল্প
পরবর্তী নিবন্ধহেরে যাওয়াদের কাছে হেরে যাবার গল্প শুনতে নেই
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

১ মন্তব্য

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন