আজ ১৪ই ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস । প্রতি বছর এই দিনটি বাংলাদেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসাবে পালিত হয়। একটি জাতি যাতে করে ভবিষ্যতে সহজে দাঁড়াতে না পারে, তাই নীল নকশা অনুযায়ী তালিকাকরে দেশের সেরা মানুষদের রাতের অন্ধকারে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় । এই ইতিহাস আমরা সবাই জানি। আমরা যেটা জানিনা সেটা হচ্ছে কিভাবে দেশের এই সেরা মানুষদের সম্মান করতে হয় অথবা এনাদের ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই দেশকে অশুভ শক্তি থেকে কিভাবে রক্ষা করতে হয়।

ধর্ম ও রাজনীতিকে উর্ধে রেখে আমি যদি একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হিসাবে চিন্তা করি কোনো ভাবেই আমাদের দেশে ১৯৭১ সালে যে বর্বরোচিত হত্যাকান্ড ঘটেছে তা মেনে নেওয়া যায় না। যেমনটি মেনে নেওয়া যায়না অংসান সূচি-র মিথ্যাচার। আর তাই, একজন সমাজ-কর্মী হিসাবে, একজন প্রবাসী হিসাবে, একজন বাবা হিসাবে আমি মনেকরি ১৯৭১ সালে ১৪ ডিসেম্বরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আমাদের যা শিখিয়ে দিয়েছে সেটাকে একটি শিক্ষা হিসাবে নিয়ে কিভাবে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেটার ব্যাপারে কাজ করা । সেটা সম্ভব আমরা যদি আমাদের নিজেরকে পরিশোধিত করতে পারি, আমাদের পরের প্রজন্মকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারি, সঠিকভাবে গাইড করতে পারি। এই যে খুব সহজেই সঠিকভাবে শব্দটি বললাম আসলে এই ‘সঠিক’ শব্দটিতে মধ্যেই সব রহস্য লুকিয়ে আছে । আমি যেটাকে সঠিক বলছি , আপ্নে সেটাকে ওঠিক বলছেন না । তাই এই সঠিকতার একটি মানদণ্ড থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।
আমাদের মধ্যে অনেকগুলি বিষয় কাজ করে:


  • ধর্মীয় চেতনা
  • ধর্মনিরপেক্ষতা
  • নাস্তিকতা
  • নারীবাদ
  • প্রগতিশীল
  • সাম্যবাদ
  • তোষামদ করা
    -স্বার্থপরতা
  • ক্ষমতালিপ্সা
  • লোভ-লালসা
  • যৌনতা
  • ক্যারিয়ার

ইত্যাদি

উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি কিছু পজিটিভ, কিছু নেগেটিভ কিছুবা নিরপেক্ষ। আমরা কোনো কিছুই অতিরিক্ত চাইনা । আমরা একজন ব্যালান্সড মানুষ হিসাবে পরিণত হয়ে চাইআমরা যদি ‘সঠিকতার’ মানদণ্ড তৈরী করতে চাই আমাদেরকে একটি বেসিক মূল্যবোধের উপর দাঁড়াতে হবে আর সেটা হচ্ছে প্রতিটি মানুষের তাদের নিজ নিজ ধর্মের প্রতি, নিজ নিজ রাজনৈতিক দর্শনের প্রতি, নিজ নিজ সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, সম্মান করা । আমরা যদি সত্যিকারভাবে একটি পরিশোধিত জাতি নির্মাণের স্বপ্ন দেখি আমাদের নিজেদের পরিশোধন সর্বাগ্রে চিন্তা করা একেবারে অনিবার্য।

আমি মেনে নিচ্ছি এই আমরা অভিভাবকরা প্রতিনিয়ত আমাদের জীবিকার তাগিদে লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। তাইবলে, আমরা আমাদের মূল্যবোধকে বিক্রি করবো কেন ? আমরা অন্যায়কে অন্যায় বলবোনা কেন? আমাদের তরুণেরা আমি বলবো আমাদের চেয়ে অনেকবেশি যুক্তিবাদী, আবেগী ও চৌকষ। এই তরুণ তরুণীরা বাংলাদেশের ক্রিকেট জয়কে যেমন দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে উল্লাস করে, দেশে পিয়াজের অন্যায্যভাবে মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে ফেসবুকের পাতায় অভিনব কার্টুন ভিডিও পোষ্ট করে একধরণের গণজাগরণের চেষ্টা করে আবার এই তরুণ তরুণীরা নষ্ট রাজনীতির কবলে পরে মানুষকে হত্যা করে, বন্ধুকে হত্যা করে, সহপাঠীকে হত্যা করে। আমাদের উচিৎ এই তরুণ তরুণীদেরকে আলোর পথ দেখানো। আর সেই আলোর পথের একটি মূলমন্ত্ৰত তা হচ্ছে মানুষকে ভালোবাসা ও সম্মান করা ।

বন্ধুরা, আজ এই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে চলুন অঙ্গীকারবদ্ধ হই। আমরা দলমতের উর্ধে থেকে সকল মানুষকে ভালোবাসতে শিখবো, সম্মান করতে শিখবো । আজকের লাঞ্চের টেবিলে, ডিনারের টেবিলে আমাদের বাচ্চাদের সাথে আজকের দিনের তাৎপর্য তুলে ধরবো ও নিজ নিজ ধর্মের আলোকে ১৯৭১ সালের সকল শহীদের আত্মা -র মঙ্গোল কামনা করবো . আমিন . জয় হোক মানবতার. জয় হোক মূল্যবোধের.

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানুষ পিছনের অনেক কিছুই ভুলে যায়…
পরবর্তী নিবন্ধভালো থেকো প্রিয় বাংলাদেশ
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন